বার্তা৭১ ডটকমঃ
যাত্রাপথে বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পর ফের যাত্রা করে নিরাপদে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ১১টা ৫ মিনিটে বুদাপেস্টে পৌঁছায় বলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান।
পানি সম্মেলনে যোগ দিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সকালে বাংলাদেশ বিমানের বিবিসি ১০১১ (বিজি১০১১) ফ্লাইটে বুদাপেস্টের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
বিমান বহরে ‘রাঙা প্রভাত’ নাম পাওয়া বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজটিতে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীসহ ৯৯ জন যাত্রী এবং ২৯ জন ক্রু ছিলেন।
যাত্রাপথে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় বিমানটি তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে জরুরি অবতরণ করে। পরে ত্রুটি সারিয়ে ‘টেস্ট রান’ দেখে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে বিমানটি সবাইকে নিয়ে হাঙ্গেরির পথে রওনা হয়।
এ সময় আশখাবাতে চার ঘণ্টা অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি করতে হয় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের।বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার কথা জানালেও সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিমানের দুই ইঞ্জিনের একটিতে ‘ফুয়েল প্রেশার’ কমে যাচ্ছিল। তাই তাৎক্ষণিকভাবে সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হিসেবে আশখাবাতে অবতরণ করে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কূটনৈতিক প্রতিবেদককে জানান, বিমান জরুরি অবতরণের পর প্রধানমন্ত্রী চার ঘণ্টা আশখাবাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করেন।
“খবর পেয়ে তুর্কমেনিস্তানের উপ প্রধানমন্ত্রী বাইমিরাত হোজামুহাম্মেদভ বিমানবন্দরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।”
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হাঙ্গেরি পৌঁছে দিতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকা থেকে লন্ডনমুখী বিমানের বিজি০০১ ফ্লাইটকে ঘুরিয়ে তুর্কমেনিস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শেখ হাসিনা আগের বিমানেই বুদাপেস্টের দিকে রওনা হওয়ায় হিথ্রোগামী ‘আকাশপ্রদীপ’ আবার নির্ধারিত গন্তব্যে উড়াল দেয়।
ঢাকা থেকে ছাড়ার প্রায় চার ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে বিমানে যান্ত্রিক ক্রটি দেখা দেওয়ার কথা জানিয়ে পাইলট আশখাবাত বিমানবন্দরে অবতরণের ঘোষণা দেন।
এই ত্রুটিকে ‘বিপজ্জনক কিছু নয়’ মন্তব্য করে পাইলট বলেন, দেশের সরকার প্রধান এই উড়োজাহাজে আছেন বলে তিনি কোনো ঝুঁকি নিতে চান না।
তুর্কমেনিস্তানের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২০ মিনিটে বিমানটি আশখাবাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
তুর্কিমিনিস্তানের ডেপুটি স্পিকার, সংসদের নারী বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান, সফররত ভারতের পরিবহনমন্ত্রী এবং সে দেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত ভিভিআইপি লাউঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বলে সুমন মাহবুব জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তুর্কিমেনিস্তানের ডেপুটি স্পিকার এবং নারী বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা৭১ ডটকমকে বলেন, “বিমানের বাম ইঞ্জিনের ‘ইঞ্জিন অয়েল’ কমে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। আমাদের পাইলটরা বেশ কিছুক্ষণ আগে বিষয়টি ধরতে পারেন। ককপিটের মনিটরে তা ইনডিকেট করছিল। তখনই তারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের জানান। এই সময় বিমান ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে ছিল। “এই সময় বাম ইঞ্জিনের ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তুর্কমেনিস্তানে অবতরণের ১২ থেকে ১৫ মিনিট আগে সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।”
ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমি জানতে পেরেছি, কেবল কয়েকটা নাট-বল্টু টাইট দেওয়াতেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উড়োজাহাজটি পুনরায় ফ্লাই করার আগে দুবার ইঞ্জিনের ট্রায়াল দেওয়া হয়।”
এই গোলযোগের জন্য রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলাকে দায়ী করে তিনি বলেন, “যদি কোনো লাইন বা পাইপ ফেটে যেত তাহলে তা সারাতে অনেক সময় লাগত। ঢাকা বা আশপাশের কোনো গন্তব্য থেকে তা নিয়ে যেতে হত। কারণ এই সব যন্ত্র ভিভিআইপি ফ্লাইটেও বহন করা হয় না।”
সরকার প্রধানের ফ্লাইটে ইঞ্জিনের নাট-বল্টু কীভাবে ঢিলা হয়ে যায় সে প্রশ্ন তুলে বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিমানের এই কর্মকর্তা।
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা নীতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ইসভান মিকোলা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আবু জাফর এবং বাংলাদেশে হাঙ্গেরির অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত গিউলা পেথোও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী উড়োজাহাজ থেকে নেমে এলে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান মিকোলা। এরপর বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসময় হাঙ্গেরির নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায়। বিমানবন্দর থেকে মটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে বুদাপেস্টের ফোর সিজনস হোটেল গ্রেশাম প্যালেসে নেওয়া হয়। সফরে শেখ হাসিনা এই হোটেলেই থাকবেন।
হাঙ্গেরিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটাই প্রথম সফর। তার এই সফরে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চারটি সমঝোতা স্মারকে সই হওয়ার কথা রয়েছে। তিন দিনের এই সফর শেষে বুধবার সকালে দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।