বার্তা৭১ ডটকমঃ
আগামী বছরেই বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগকাজ শুরু হবে। এতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলা শুধু রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায়ই আসবে না, রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের গণপরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, প্রসারিত হবে সে অঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্য।
পদ্মায় রেলপথ স্থাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন, ঢাকা-গেন্ডারিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ডাবল লাইন, লুপ, সাইডিং ও ওয়াই-কানেকশনসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাঙ্গা থেকে নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ৮৫ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পেই বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীসহ ছোট-বড় ১২৫টি সেতু নির্মিত হবে। এছাড়া এ রেলপথে তিনটি ফ্লাইওভারসহ ৪০ পয়েন্টে নির্মাণ করা হবে লেভেল ক্রসিং ও আন্ডারপাস।
জানা গেছে, দুই পর্যায়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পের দুটি অংশই বাস্তবায়নে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। প্রকল্পে চীনের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। এছাড়া ১০ হাজার ২৩৯ কোটি সরকারি অর্থায়ন। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, পরামর্শক ও অন্য খাতে এই অর্থ ব্যয় হবে।
এ ব্যাপারে পদ্মা রেল প্রকল্প পরিচালক সুকুমার ভৌমিক বলেন, পদ্মা সেতু দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প। এতে ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার উড়াল (এলিভেটেড) রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এই উড়ালপথের ওপরেই রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে। রেলস্টেশনে যাত্রীদের ওঠার জন্য থাকবে লিফটের সুবিধা। স্টেশনে যাত্রীদের আসা-যাওয়ার জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। পাথরবিহীন এলিভেটেড অংশসহ পুরো রেলপথ নির্মাণে ব্যবহার করা হবে উন্নত প্রযুক্তি।
রেলওয়ের তথ্য মতে, বহুমুখী এ সেতুর ছয় কিলোমিটার রেল সংযোগ অংশটি হবে আধুনিক প্রযুক্তির পাথরবিহীন রেলপথ (ব্যালাস্ট লেস ট্র্যাক)। পাশাপাশি ঢাকা-মাওয়া অংশে ২২ কিলোমিটারও হবে পাথরবিহীন। ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর রেলপথ প্রকল্পের আওতায় মোট ২৮ কিলোমিটার অংশে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে রেলওয়ে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এ রেলপথ নির্মাণ ব্যয় কিছুটা বেশি হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় থাকবে না বললেই চলে। কনক্রিটের ঢালাই করা ভিত্তির (বেইজ) ওপর রেলপাত বসানো হবে। এ ধরনের রেলপথের আয়ুষ্কালও অনেক বেশি। মূলত উচ্চগতির ট্রেন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মেট্রো ও টানেলে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ইতিমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক মিডিয়াকে বলেন, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ ইতিহাস হয়ে থাকবে। আগামী বছরেই পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। রেলওয়েতে চলমান ৪৬টি উন্নয়ন প্রকল্পসহ নতুন এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রেলওয়েতে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে জানান তিনি।