বার্তা৭১ ডটকমঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল নীল দল, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দল ও বাম সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল গোলাপী দল প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
নীল দল থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মাস্টার’দা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন পেয়েছেন আইন বিভাগের শিক্ষক ও কবি জসিম উদদীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ।
সাদা দল থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন পেয়েছেন স্যার পি জে হার্টস ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ ও বর্তমান কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান।
বাম সমর্থিত গোলাপী দল থেকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন।
নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষকদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচার নিয়ে বির্বাতার কথা হয় নীল দলের সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের সাথে।
তিনি বলেন, ‘অতীতে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ জয় অর্জন করেছি। আমরা শিক্ষকদের জন্য, তাদের বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করেছি। শিক্ষকদের বিদেশে গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষকদের ভাতার ওপর যাতে কোনো ট্যাক্স দিতে না হয় তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত আন্দোলন করে শিক্ষকদের জন্য গ্রেড-১ পর্যন্ত নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। ফলে শিক্ষকদের মর্যাদার একটি মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তনের জন্য নীল দলের ওপর, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর সকলের আস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার যে পরিবেশ এই পরিবেশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পরিবেশ, এই পরিবেশ উন্নয়নের পরিবেশ বলে মনে করি আমি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখনকার শিক্ষকরা যারা নীল দলের হয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের ওপর আস্থা রাখার মতো একটি পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করেছি। ’
অন্যদিকে সরকার সমর্থিত নীল দলের সাথে বাম দলগুলো থাকলেও ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচনে আলাদাভাবে নিজের গোলাপি প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নেয়। এক্ষেত্রে সরকার সমর্থক দলের নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গী ও মূলনীতির মাধ্যমে আলাদা নির্বাচন করবেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। তারা আমাদের সাথে বহু আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে করা আন্দোলনেরও অংশীদার তারা। তবে তাদের আলাদাভাবে নির্বাচানে অংশগ্রহণ নীল দলের জয়ের ব্যাপারে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করি না আমরা।‘
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে, এই ধারা বজায় রাখার জন্য হলেও শিক্ষকরা তাদের পুনরায় নির্বাচন করবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচনের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। নিজ নিজ দলের জয়ের লক্ষ্যে নীল, সাদা ও গোলাপী দল মাঠে নেমে পড়েছে। শিক্ষকদের চায়ের কাপে জমে উঠছে তুফান। নির্বাচনে জয়ী হলে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সব প্যানেলের প্রার্থীরা।
নির্বাচনী প্রচার ও প্রতিশ্রুতির নানা দিক নিয়ে কথা হয় সাদা দলের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলামের সাথে। শিক্ষকদের সাথে দেখা করে সমর্থন চাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান বোঝানোর জন্যই কাজ করছি। শিক্ষকরাও এবার ঢাবি শিক্ষক সমিতিতে পরিবর্তন চান। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে টানা কয়েক মেয়াদে নীল দল জয়ী হচ্ছে।
ঢাবিতে এখন মেধার ভিত্তিতে নয়, দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ হয় বলে মত প্রকাশ করে তিনি বলেন, অতীতে আমরা শিক্ষক সমিতিতে থাকাকালে সব শিক্ষকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি। এবারও নির্বাচনের জয়-পরাজয় মেনে নিয়ে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে যারা মনে করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নয় তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের দলের স্থপতি জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা। যারা এই কথা বলে তারা নিজেরাই জামায়াত-শিবিরকে দলে রেখে দল ভারী করে রেখেছে। সাদা দলে এলে রাজাকার আর নীল দলে থাকলে দেশপ্রেমিক হয়ে যাচ্ছে তারা।
নীল দল ও সাদা দলের নির্বাচনী প্রচারণার মতো মাঠে তেমন সরব উপস্থিতি নেই বাম সমর্থিত গোলাপি দলের। শিক্ষকদের সমর্থনের মাধ্যমে এবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করে গোলাপি দলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আমরা। শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে আগে আমরা নীল দলের সাথে কাজ করেছি। তবে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা আলাদাভাবে নির্বাচন করছি গত বছর থেকে।
নির্বাচনের মাঠে সরব উপস্থিতি না থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এক সময় শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদে জয় লাভ করে নেতৃত্ব দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে শিক্ষকরা আমাদের পুনরায় বিজয়ী করবেন। তবে আমাদের নীরব প্রচারকাজ অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, নীল দল থেকে ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচনে নিজদের উপস্থিতি ও অস্তিত্বের জন্য আলাদা প্যানেল করে গোলাপি দল। তবে গত নির্বাচনে ১৫টি পদের কোনোটাতেই জয়ী হতে পারেনি তারা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন বছরে নীল দল নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেছে। ২০১৪ সালের শিক্ষক সমিতি কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে নীল দল ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টি ও সাদা দল ৬টি আসন পায়। ২০১৫ সালে নীল দল-বাম দল একত্রে ১৫টি পদেই জয়ী হয়। সাদা দল সেবার কোনো পদেই জয়লাভ করতে পারেনি। গতবার সাদা দলকে আবারো অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হয়। নীল দল ১৫টি আসনের ১৪টিতে জয়ী হয় এবং সাদা দল পায় একটি। অন্যদিকে গোলাপি দল প্রথমবারের মতো আলাদা হলেও জয়ী হতে পারেনি কোনো পদেই।
এবার অপেক্ষার পালা, কারা নেতৃত্ব দেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে।