বার্তা৭১ ডটকমঃ
শুধুমাত্র ঢাকা ও আশেপাশের জেলায় তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে বছরে চারশ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি গুণতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত এলাকাগুলোতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে তা বিনা পয়সায় ভোগ করছেন অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ। এরা শহর ও গ্রামের বাসিন্দা।পাশাপাশি মফস্বল ও উপশহরগুলোতে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের সংযোগ দিয়ে আয় করছেন অবৈধ অর্থ।
অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ করতে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (তিতাস গ্যাস)। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সবুজ সংকেতের অভাবে এবং প্রশাসন ও পুলিশের অসহযোগিতায় ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে, গত তিন বছরে পাঁচ লাখের বেশি অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নারসিংদী, মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়। তিতাস গ্যাসের শীর্ষ থেকে তৃণমূলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের এলাকায় ঠিকাদারদের মাধ্যমে দিনে দুপুরে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পাইপলাইন বসিয়ে এসব অবৈধ সংযোগ দিয়েছেন। প্রতিটি সংযোগের জন্য এলাকা ও দূরত্বভেদে বিশ হাজার থেকে আশি হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। এসব টাকার ভাগ পেয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও পুলিশ। অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার বিশেষ কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকার শুরুতেই কঠোর হস্তে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দমন না করলে এই সংখ্যা এত বিশাল হতো না। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ইশারায় এবং সরকারের গড়িমসির ফলেই এমনটি হয়েছে। তারা বলেন, গ্যাস স্বল্পতার কারণে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ব্যয়বহুল তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে বিপুল সংখ্যায় অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কোন রাজস্বও আসছে না।
বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকায় গ্যাস বিতরণে নিয়োজিত ‘তিতাস গ্যাস কোম্পানির’ মোট বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৭ (২০১৫ জুন ৩০ অনুসারে)। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ১৮ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৩। এছাড়া ৭টি সরকরি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ২৮টি ব্যক্তিগত বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৩টি সার কারখানা, ৪ হাজার ৫৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান ৩৩১টি সিএনজি স্টেশন, এক হাজার ৮০টি ক্যাপটিভ পাওয়ার স্টেশন, ১০ হাজার ৯১৩টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ করে তিতাস গ্যাস।
বিদ্যুৎ বিভগের তথ্যানুযায়ী, গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যাহত হচ্ছে। ব্যয়বহুল তেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে চাহিদার জোগান দিতে। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, দেশে যে পরিমাণ গ্যাস (প্রমাণিত) মজুত আছে তা দিয়ে আর দশ থেকে বারও বছরের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে এ প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্যাপকভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ অভিযানে পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া মুশকিল। সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ ও প্রশাসন থেকেও চাহিদা মোতাবেক লোকবল সব সময় পাওয়া যায় না। এছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীরা সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলে।