বার্তা৭১ ডটকমঃ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম জয়ললিতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দাহ নয়; দ্রাবিড়ীয় রীতিতে চেন্নাইয়ের মারিনা বিচে সমাধিস্থ করা হয় তাকে। আম্মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
রূপালি পর্দার এক নম্বর নায়িকা থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন জয়ললিতা। সম্পত্তির দিক থেকেও ভক্তদের ‘আম্মা’ নজর কেড়েছিলেন। প্রয়াত জয়ললিতা রেখে গেছেন প্রায় ১১৩ কোটি ৭৩ লাখ রুপির সম্পত্তি। অবশ্য এই সম্পত্তির ঘোষণা তিনি করেছিলেন ২০১৫ সালে।
প্রায় ৪১ কোটি ৬৩ রুপির স্থাবর ও ৭২ কোটি ৯ লাখ রুপির অস্থাবর সম্পত্তি ছিল জয়ললিতার। ৪১ লাখ টাকা নগদ সম্পত্তি ছিল তার কাছে। শুধু তাই নয়, ২৪ হাজার স্কয়ার ফুটের প্রায় ৪৩ কোটি টাকার একটি বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকতেন জয়ললিতা।
১৪ দশমিক ৫০ একর কৃষিজ জমি কিনেছিলেন জয়ললিতা। চেউর গ্রামে ৩ দশমিক ৪৩ একর আরেকটি কৃষিজ জমি ছিল তার। তেলেঙ্গানাতেও জমি ছিল তার। হায়দরাবাদে কিছু ব্যবসার উপযুক্ত বিল্ডিংও ছিল জয়ললিতার।
জয়ললিতার কাছে ছিল দুটো টয়েটো প্রাডো, যার মূল্য ৪০ লাখ টাকার মতো। এছাড়া ছিল টেম্পো ট্র্যাভেলার, টেম্পো ট্যাক্স, মহিন্দ্রা জিপ, অ্যাম্বাসেডার, মহিন্দ্রা বোলেরো, একটি কন্টেসা- এগুলোর মোট মূল্য ৪২ লাখ ২৫ হাজার রুপি। সোনার গয়নার পরিমাণ ২১,২৮০.৩০০ গ্রাম। কিন্তু এগুলোর মূল্য জানা যায়নি। কারণ, হিসাব বহির্ভূত মামলায় যখন তাকে চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল তখন এই সোনার গয়নাগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে এগুলো কর্নাটক সরকারের ট্রেজারিতে জমা আছে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সমর্থ হলেও গয়নাগুলো এখনও ফেরত পাননি আম্মা।
জয়ললিতা ‘বিজনেস পার্টনার’ হিসেবে পাঁচটি বাণিজ্যিক সংস্থায় বিনিয়োগ করেছিলেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কোদানাদ এস্টেট এবং শ্রী জয়া পাবলিকেশন। এই দুই সংস্থায় জয়ললিতার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৮২ হাজার ৮০৮ টাকা।
জয়ললিতা মারা যাওয়ার আগে তার এই বিশাল অর্থ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে কাউকে রেখে যাননি কিংবা উইল করেও যাননি। ফলে কে বা কারা তার এ অর্থ-সম্পত্তি দাবি করতে পারেন, তাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশ। আলোচনায় যার নাম বেশি শোনা যাচ্ছে, তিনি হলেন শশীকালা নটরাজন। রাজনৈতিক সহচর হিসেবে তিনি জয়ললিতার সবচেয়ে ঘনিষ্ট। জয়ললিতার শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতাও করেন তিনি।
শশীকালা নামের এই নারীর সঙ্গে ১৯৮০’র দশকে দেখা হয় জয়ললিতার। পরে জয়ললিতার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জয়ার সরকারে পর্দার সামনে ও আড়ালে একান্ত সহচর ছিলেন শশীকালা। বেদা নিলায়ম বাংলোয় থাকেন তিনিও। মঙ্গলবার জয়াকে সমাহিত করে সোজা বেদা নিলায়মে ফেরেন তিনি। ফলে শশীকালা বাংলোর মালিকানা দাবি করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া জয়ললিতার ভাইয়ের মেয়ে দীপা জয়কুমার ও ছেলে দীপক জয়কুমারও একই দাবি করতে পারেন। কারণ ১৯৬৭ সালে ১ লাখ ১৫ হাজার রুপি দিয়ে জয়ার মা পোয়েস গার্ডেনের বাংলোটি কেনেন। সেই সূত্রে জয়ার ভাইয়ের ছেলে-মেয়ে এর মালিকানার অংশ দাবি করতে পারেন। কিন্তু ন্যায্য প্রাপ্য কার? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হয়তো সময় লাগবে।
এছাড়া জমি, নগদ অর্থ এগুলো কে পেতে চলেছেন তা নিয়েও চলছে জল্পনা। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া