২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু জাতীয় আয় ২ হাজার ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরে ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১’ অনুমোদন করেছে সরকার।
মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ের মধ্যে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হার ৫ দশমিক ২ শতাংশে স্থির রাখার কথাও বলা হয়েছে এই পরিকল্পনায়।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এটি বাংলাদেশ সরকার প্রণীত প্রথম দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
পরিকল্পনামন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় থেকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে; যাতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ২ হাজার ডলার।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১১ এর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১০-১১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ৮১৮ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ৭৫১ ডলার।
প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় দেশে সুশাসনের ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনটি মৌলিক নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আইনের শাসন নিশ্চিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, উন্নত সরকারি প্রাাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যক্তি খাতকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো দক্ষ করে তোলা।
দেশে দারিদ্র্যের হার ২০২১ সালের মধ্যে অর্থ্যাৎ আগামী নয় বছরের মধ্যে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। আর তিন বছরের মধ্যে অর্থ্যাৎ ২০১৫ সালের মধ্যে এ হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধরা হয়েছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনায়।
পরিকল্পনার সার সংক্ষেপে বলা হয়, “উল্লেখযোগ্য অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ ৪ কোটি ৭০ লাখ দারিদ্র্য সীমার নিচের লোকসংখ্যাসহ এখনো দরিদ্র দেশ। দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।”
“সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে ২২ দশমিক ৫ এবং ২০২১ সালে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১০ সালের হিসাবে দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।
উচ্চতর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন ও শিল্পখাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে, দারিদ্র্য নিরসনে প্রধান কৌশল বলে পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া অন্য কৌশলগুলো হলো- দরিদ্র্যদের উৎপাদন উপকরণে খাসজমি, সার, সেচ, বিদ্যুতে মালিকানা দেওয়া, সব ক্ষেত্রে উৎপাদনের হার বৃদ্ধি, পশ্চাদপদ অঞ্চলগুলোয় অবকাঠামো সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও এর বলয় বৃদ্ধি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এবং ক্ষুদ্র ঋণের বিস্তার।
২০০৯ সালের এপ্রিলে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে ভিত্তি হিসাবে ধরে দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
২০২১ সালে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর আগে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে এই পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন অর্জনের তাগিদ থেকেই সরকার দীর্ঘমেয়াদি এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে মহাজোট সরকার।
প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় জনগণের অংশীদারিত্ব ভিত্তিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ, কার্যকরী সরকার ব্যবস্থা ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিশ্চিতকরণ, বিশ্বায়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ, উন্নয়ন ও নাগরিক কল্যাণ বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন, সুদৃঢ় অবকাঠামো নির্মাণসহ নগর সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো উপশম এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিত্য-নতুন উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে বেগবান করার কথা বলা হয়েছে।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে ২০১৫ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) ৮ শতাংশ এবং ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে পরিকল্পনায়।
গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ।
২০১৫ সাল নাগাদ জিডিপি’র ৩২ দশমিক ১ শতাংশ সঞ্চয় ও ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ এবং ২০২১ সালে তা যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ১ ও ৩৮ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
পরিকল্পনায় ২০২১ সাল নাগাদ মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার একটি সহনীয় পর্যায়ে অর্থ্যাৎ ৫ দশমিক ২ শতাংশে স্থির রাখার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর মূল্যস্ফীতি এক অংকের ঘরে নেমেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধরা হয়েছে।
বেকারত্বের হার ২০১৫ সালে ২০ শতাংশে এবং ২০২১ সালে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রস্তাবিত প্রেক্ষিত পরিকল্পনায়।