ভারতে বাংলাদেশের একটি বই নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একটি বেসরকারি সংস্থা। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র এবং সিআইএ’ শীর্ষক বইটির লেখক মাসুদুল হক। লিগ্যাল এইড ফোরাম নামে সংস্থাটি গতকাল দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, বইটি ভারতবিরোধী। তাই এটাকে ভারতের বাজারে নিষিদ্ধ করতে হবে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। এ বিষয়ে দিল্লি থেকে সাংবাদিক শুভজিৎ বাগচী বিবিসিকে জানান, অল ইন্ডিয়ান লিগ্যাল এইড ফোরাম পশ্চিমবঙ্গের একটি আইনি সংগঠন। এর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি ও সাবেক বিচারপতিসহ একাধিক শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্তা ও আইএস অফিসার যুক্ত। এই সংগঠনটির তরফে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সচিব আইনজীবী জয়দীপ মুখার্জি দিল্লিতে দাবি করেন- বইটিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। বিবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জয়দীপ মুখার্জি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের যিনি প্রবক্তা এবং বাংলাদেশের জাতির জনক সেই শেখ মুজিবুর রহমান সম্বন্ধে একটি পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, দেশের সমস্ত বামপন্থিদেরকে নির্মূল করে দেয়া হবে, তিনি যদি ক্ষমতায় আসতে পারেন। তবে তিনি কখনওই এ ধরনের কথা বলেননি। বইটিতে আরও বলা হয়েছে, আমাদের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের দু’টি বাহিনী যৌথভাবে শেখ মুজিবকে মদত দিয়েছিল এবং পাকিস্তানকে ভাগ করার জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিল।
এটা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। স্বাধীনতা যুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত লড়াই ছিল। এতে ভারত সরকারের কোন গোয়েন্দা তৎপরতা জড়িত ছিল না। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অংশ নিয়েছিল সেটা তো বিভিন্ন রেকর্ডে রয়েছে। পুরনো যারা সে সময় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা বিভিন্ন জীবনীতে তা লিখেছেন। অনেকে এখন সেটা বলবেন। তাহলে এটা ইতিহাসগত ভুল কোথায়। জবাবে জয়দীপ মুখার্জি বলেন, ইতিহাসগতভাবে এখানেই ভুল যে, ভারত সরকার কখনই পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রকে দ্বিখণ্ডিত করার জন্য বা তাদের কোন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। ভারতবর্ষের সরকার তখনই যুদ্ধে শামিল হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যখন ভারতবর্ষের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা যায় দলে দলে মানুষ বাংলাদেশ থেকে চলে আসছিল পাকিস্তানি সেনাদের হাতে অত্যাচারিত হয়ে। ভারতবর্ষের সার্বভৌম এবং টেরিটরি বাঁচানোর জন্য ভারতের প্রতিরক্ষা দপ্তর যুদ্ধে শামিল হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, বইটি পূর্ব ভারতে ছড়ানো হয়েছে। বিশেষভাবে ছড়ানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ লাগোয়া অঞ্চলে। তার দাবি, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ করার উদ্দেশ্যেই বইটি পশ্চিমবঙ্গে ছড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বিকাল পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেনি।