বার্তা৭১ ডটকমঃ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে চার লাখের বেশি। যার ৬০ ভাগই শিশু। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, বড় ধরণের ঝুঁকিতে রয়েছে এই শরণার্থী শিশুরা।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দুই লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, চলতি বছরের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বেশকিছু পুলিশ পোস্ট ও সেনাবাহিনীর শিবিরে হামলা চালায় কিছু রোহিঙ্গা বিদ্রোহী। এতে ডজন খানেক পুলিশ নিহত হয়।
হামলার জবাবে সামরিক অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা জানাচ্ছেন ভিন্ন কথা। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন এটা রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ হতে পারে।
বাংলাদেশ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে। ক্যাম্প স্থাপন, ত্রাণ সরবরাহসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের হিসেব মতে প্রতিদিনই গড়ে দশ থেকে পনরো হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে, যার একটি বড় অংশই শিশু।
অনেক শিশুই এসেছে তাদের বাবা-মা কিংবা আত্মীয় স্বজন ছাড়াই। জাতিসংঘ বলছে তাদের সাথে কক্সবাজারে কাজ করছে এমন সাহায্য সংস্থাগুলোর হিসেবে এখন পর্যন্ত এরকম এক হাজার তিনশর বেশি শিশুকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সাহায্য সংস্থাগুলোর ধারণা, এই শিশুদের বাবা-মা দুজনকেই অথবা বাবাকে মিয়ানমারে মেরে ফেলা হয়েছে।
জাতিসংঘ, সেইফ দ্যা চিলড্রেন, এএফপি, রয়টার্স সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে এক হাজার ১০০’র বেশি শিশু দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে একাই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
চলতি ঢল অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে আরো ৬ লাখ শিশু পালিয়ে আসতে পারে। এদের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক শিশু।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে জায়গা নাই। শিশুরা, পাচার, যৌন নির্যাতন, মজুর হিসেবে ব্যবহার ও বাল্যবিয়ের মতো ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই শিশুরা একটি বিশেষ ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। তারা নিজের চোখে গোলাগুলি, নির্যাতন, খুন, বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। ক্যামেরা দেখেও গুলি ভেবে আঁতকে ওঠছে কোনো কোনো শিশু। দুঃসহ স্মৃতিগুলো তাড়া করছে তাদের।
শরণার্থীর দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে, নারী ও শিশু। এর মধ্যে শতকরা ১৩ ভাগ নারী হয় অন্তসত্ত্বা কিংবা স্তন্যদাত্রী মা। যেখানে স্বাস্থ্যসেবা না পেলে অপুষ্টিসহ বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির আশংকা রয়েছে।
শিশুরা খাদ্য-বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের জন্য লড়াই করছে। ত্রাণের গাড়ি দেখলেই ছুটছে তারা। কিন্তু হুড়োহুড়ি করে বয়স্কদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। সংগ্রহ করতে পারছে না খাবার।
এদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি-র দিকে উঠছে আঙুল। তবে মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর প্রত্যাশা করছেন সবাই।