বার্তা৭১ ডটকমঃ খাবারের খাদ্যমান নিশ্চিতকরণে ও খাদ্যের অপচয় রোধে খাদ্যের মোড়কে যথাযথভাবে খাদ্যের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ বসানোর গুর“ত্ব
সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ আবু নোমান মোহাম্মদ আতাহার আলি ও বাংলাদেশ আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক ইন্সিটিউিট (বিলিয়া) এর গবেষণা কর্মকর্তা ও আইনজীবী মো: শাহনেওয়াজ পাটোয়ারী এক যৌথ গবেষণাপত্রে প্রক্রিয়াজাত খাবারের খাদ্যমান নিশ্চিতকরণে ও খাদ্যের অপচয় রোধে খাদ্যের মোড়কে যথাযথভাবে খাদ্যের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ বসানোর গুর“ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। গবেষণাপত্রটির রিপোর্ট মতে বাংলাদেশে খাদ্যের অপচয়ের অন্যতম কারণ মেয়াদোর্ত্তীর্ণের তারিখ এর বিভিন্ন পরিভাষা ভূল বুঝা। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত “অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অব এশিয়ান ল”-তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে প্রক্রিয়াজাত খাবারের মোড়কে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ সঠিকভাবে না বসালে কিভাবে খাদ্যের অপচয় বৃদ্ধি পায় তা এক সমীক্ষার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। দৈব চয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষিত ভোক্তাদের মধ্যে পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ৯৫.৩২% ভোক্তা খাবারের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে সে খাবার আর তারা খায়না এবং তাদের বেশিরভাগ হয় ঐ খাবার ফেরত দেয় বা ফেলে দেয়। নিবন্ধটিতে বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলের উদাহরণ দিয়ে দেখানো হয়েছে যে, মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই সব খাবার খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায় না। বিশেষ করে যেসব খাবারের মোড়কে “বেস্ট ইফ ইউজ বিফোর” অথবা “সেল বাই” দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা হয় সেসব খাবার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেও খাওয়ার উপযোগী থাকে। সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, শিক্ষিত ভোক্তাদের মধ্যে ৩৬.২৬% লোক খাবারের মোড়কে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভাষা যেমন “বেস্ট ইফ ইউজ বিফোর”, “সেল বাই”, “এক্সপায়ারি ডেট”, বা “ইউজ বাই” -এসবের তাৎপর্য একদমই বুঝে না। গবেষকেরা এই সমস্যা সমাধানে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লিখনে সহজবোধ্য ও সমন্বিত ভাষা ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন। গবেষণাপত্রটিতে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে খাবারের মেয়াদ বের করার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কোন পদ্ধতি না থাকার কারনে খাদ্য উৎপাদকেরা “ট্রায়াল এন্ড এরর” পদ্ধতির মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নির্ধারণ করে থাকে। এতে এসব খাবারের ভোক্তারা স্বা¯’্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এছাড়াও খাবারের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখার কোন নির্ধারিত ভাষা খাদ্য মোড়কজাতকরন আইনে না থাকার কারনে উৎপাদকেরা যেমন ই”ছা তেমন ভাষা ব্যবহার করছেন। এই কারনে ভোক্তারা ভাষাগত বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে খাওয়ার উপযোগী অনেক খাবার ফেলে দেয়। এতে প্রতি বছর বিপুল পরিমান খাদ্য নষ্ট হ”েছ। তাছাড়াও গবেষষকেরা প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিভিন্ন চেইন সুপার শপে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান যে, প্রক্রিয়াজাত খাবারের মোড়কে খাবারের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এত ছোট ও অস্পষ্ট ভাবে লেখা থাকে যে অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ও খাবারের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ সঠিকভাবে বুঝা যায় না। গবেষষকেরা জানান, বিএসটিআই ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর – এই দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগন শুধুমাত্র খাদ্য উৎপাদকেরা খাদ্য মোড়কজাতকরন করার সময় উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বসা”েছ কিনা সেটি তদারক করে। আর কেউ যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি করে। কিš‘ দুটো প্রতিষ্ঠানের কোনটাই সঠিকভাবে খাবারের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বসানো হ”েছ কিনা তা তদারকি করে না। নিবন্ধটিতে জনস্বা¯’্য নিয়ে পরিচালিত বিভিন্ন সমীক্ষার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে যে, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বিষয়ে উৎপাদকদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করাটা কোনোমতেই সঠিক কাজ নয়। গবেষষকেরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশ্বে অগ্রগামী যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার খাদ্য ব্যব¯’াপনা ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, সহজবোধ্য ও স¤পূর্ণ ভাষায় খাবারের মোড়কের তথ্য ও উপাত্তগুলি লিখলে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ স¤পর্কিত বিভ্রান্তি সহজে কাটিয়ে উঠা যাবে এবং বিপুল পরিমান খাদ্য অপচয় রোধ করা সম্ভবপর হবে।
উল্লেখ্য যে, এই গবেষণাটি এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত হয়।