বার্তা৭১ ডটকমঃ গ্যাস্ট্রিক বা আলসার নামটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন লোক খুঁজে বের করা হয়তো খুব কঠিন হবে। সাধারণত লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বুঝিয়ে থাকেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় পেপটিক আলসার।
সাধারণ ব্যথা ভেবে আমরা গ্যাস্ট্রিক বা আলসার ব্যথাকে ততটা গুরুত্বই দেই না। ট্যাবলেট খেয়ে সে সময়ের জন্য ক্ষণিক আরাম পাই। ওষুধের প্রভাব কাটলে আবার ব্যথা ফিরে আসে। এই রোগটিই একটা সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। হতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও। এমনকি গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে ক্যান্সার পর্যন্তও হতে পারে। তাই আগে থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লক্ষণগুলো জানা থাকলে সুবিধে হয়। রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করার আগে চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাওয়া যায় বা সতর্কতা নেওয়া যায়।
পেপটিক আলসার যে শুধুমাত্র পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় বরং এটি পৌষ্ঠিকতন্ত্রের যেকোনো অংশেই হতে পারে। সাধারণত পৌষ্ঠিক তন্ত্রের যে যে অংশে পেপটিক আলসার দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে-
. অন্ননালীর নিচের প্রান্ত
. পাকস্থলী
. ডিওডেনামের বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ।
. এছাড়া পৌষ্ঠিক তন্ত্রের অপারেশনের পর যে অংশে জোড়া লাগানো হয় সে অংশে।
যে সব কারণে পেপটিক আলসার হতে পারে:
সাধারণত যে কথাটা প্রচলিত ভাজা-পোড়া কিংবা ঝাল জাতীয় খাবার খেলে পেপটিক আলসার হয় এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেলেনি। তবে যারা নিয়মিত আহার গ্রহণ করেন না কিংবা দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকে তাদের পেপটিক আলসার দেখা দিতে পারে। এছাড়াও রয়েছে কিছু কারণ।
বংশগত: কারো নিকটতম আত্মীয় স্বজন যেমন- মা, বাবা, চাচা, মামা, খালা, ফুফু যদি এ রোগে ভুগে থাকেন তবে তাদের পেপটিক আলসার হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।
রক্তের গ্রুপ: যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ তাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
রোগ-জীবাণু: হেলিকো বেক্টার পাইলোরি নামক এক প্রকার অণুজীব এ রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী।
ওষুধ: যে সমস্ত ওষুধ সেবনে পেপটিক আলসার হতে পারে তন্মধ্যে ব্যথানাশক ওষুধ
ধূমপান: ধূমপায়ীদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
এছাড়াও কারো পৌষ্ঠিকতন্ত্র থেকে যদি বেশি পরিমাণে এসিড এবং প্রোটিন পরিপাককারী এক ধরনের এনজাইম বা পেপসিন নামে পরিচিত তা নিঃসৃত হতে থাকে এবং জন্মগতভাবেই পৌষ্ঠিকতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল থাকে তাহলেও পেপটিক আলসার হতে পারে।
উপসর্গ সমূহ:
সাধারণত পেটের উপরি ভাগের মাঝখানে বক্ষ পিঞ্জরের ঠিক নিচে পেটিক আলসারের ব্যথা অনুভব হয়। তবে কখনো কখনো ব্যথাটা পেছনের দিকেও যেতে পারে।
ক্ষুধার্ত থাকলে ব্যথা : এ জাতীয় রোগী ক্ষুধার্ত হলেই প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে এবং খাবার খেলে সাথে সাথে ব্যথা কমে যায়।
অনেক সময় রাতের বেলা পেটে ব্যথার কারণে রোগী ঘুম থেকে জেগে উঠে কিছু খেলে ব্যথা কমে যায়।
পেপটিক আলসারের ব্যথা সাধারণত সবসময় থাকে না, একাধারে ব্যথাটা কয়েক সপ্তাহ চলতে থাকে তারপর রোগী সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়, এ অবস্থা কয়েকমাস থাকে তারপর আবার কয়েক সপ্তাহ ধরে ঠিক আগের মতো ব্যথা অনুভব হয়।
পেপটিক আলসার ব্যথা সাধারণত দুধ, এন্টাসিড, খাবার খেলে কিংবা বমি করলে অথবা ঢেকুর তুললে ব্যথা কমে যায়।
এছাড়াও পেপটিক আলসারের রোগীদের মধ্যে বুক জ্বালা, অরুচি, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, কিংবা হঠাৎ করে রক্ত বমি অথবা পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে।
পেপটিক আলসারের যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:
. পাকস্থলী ফুটা হয়ে যেতে পারে।
. রক্ত বমি হতে পারে।
. কালো পায়খানা হতে পা।
. রক্তশূন্যতা হতে পারে।
. পৌষ্টিক নালীর পথ সরু হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর বার বার বমি হতে পারে।
. ক্যান্সার হতে পারে।
চিকিৎসা:
পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
ব্যথা নাশক ওষুধ অর্থাৎ এসপ্রিন জাতীয় ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে এবং নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
জীবাণুজনিত কারণে যদি এ রোগ হয়ে থাকে তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ।
যারা দীর্ঘমেয়াদী পেপটিক আলসারে ভুগছেন তাদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। পেপটিক আলসার জনিত জটিলতা আগে থেকেই সনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।