বার্তা৭১ ডটকমঃ ২০১৫ বিশ্বকাপের সেই ঘটনাবহুল কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের আবহে বাজে যুদ্ধের দামামা। প্রতিটি ম্যাচেই থাকে উত্তেজনার রসদ। এবারের প্রেক্ষাপট একটু অন্যরকম হলেও মঞ্চটা বারুদ ছড়ানোর জন্য একেবারে আদর্শ। শ্রীলংকায় ত্রিদেশীয় টি ২০ সিরিজ নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে আজ বাংলাদেশের সামনে ভারত।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে শিরোপা লড়াই। এক ম্যাচে অনেক হিসাব মেলানোর আছে বাংলাদেশের। টি ২০ তে দু’দলের আগের সাত ম্যাচে কখনও ভারতকে হারাতে না পারার হতাশার গল্পটা নতুন করে লেখার চ্যালেঞ্জ। টেস্ট মর্র্যাদা পাওয়ার পর দ্বিপক্ষীয় সিরিজের বাইরে কখনও কোনো প্রতিযোগিতার শিরোপা জিততে না পারার ধারায় ছেদ টানার চ্যালেঞ্জ। আজ জিতলে খুলে যাবে ফাইনালের গেরোও। এমন ম্যাচে বাড়তি চাপ তো থাকবেই।
আশার কথা হল, সিরিজে নিজেদের আগের ম্যাচেই স্নায়ুচাপের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় উতরে গেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার শ্রীলংকার বিপক্ষে অলিখিত সেমিফাইনালে রূপ নেয়া প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচের শেষ ওভারে মাঠ ও মাঠের বাইরে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা ছাড়িয়ে গেছে আগের সবকিছুই।
শেষ ওভারে লংকান পেসার উদানা টানা দুটি বাউন্সার দেয়ার পরও আম্পায়ার ‘নো’ বলের সংকেত না দেয়ায় রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল মাঠ। ক্ষণিকের উত্তেজনায় মেজাজ হারিয়ে একপর্যায়ে দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাহমুদউল্লাহ ও রুবেল তাতে সাড়া দিলে এ বিতর্ক গড়াত বহুদূর।
তবে শেষ পর্যন্ত শুভবুদ্ধির জয় হয়। দুর্দান্ত এক ছক্কায় এক বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশকে দুই উইকেটের অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দেন মাহমুদউল্লাহ। এত নাটক ও তীব্র স্নায়ুচাপ সামলে শ্রীলংকার মাটিতে শ্রীলংকাকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর ভারতকে আর অজেয় ভাবার কোনো কারণ নেই বাংলাদেশের। শ্রীলংকা সফরের আগে যে হতাশা ঘিরে ধরেছিল দলকে, সেটি কেটে গেছে। এবার ভারত ও ফাইনাল-জুজু কাটাতে প্রস্তুত সাকিবরা।
এরআগে এশিয়া কাপ ও ত্রিদেশীয় সিরিজ মিলিয়ে যতবারই ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ, প্রতিবারই পুড়তে হয়েছে স্বপ্নভঙ্গের হতাশায়। ঢাকায় ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনালে এই ভারতই ছিল বাংলাদেশের ঘাতক। ওই বছরই বাঙ্গালোরে টি ২০ বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারতের কাছে এক রানের সেই অবিশ্বাস্য হারের দুঃস্মৃতি আজও তাড়া করে টাইগারদের। তবে এবার নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুই ম্যাচে প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতিতে তীব্র স্নায়ুচাপ সামলে দলকে জিতিয়ে বাঙ্গালোর ব্যর্থতার প্রায়শ্চিত্ত করে ফেলেছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। মানসিক বাধার দেয়াল গুঁড়িয়ে যাওয়ায় আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকেই আজ তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় গৌরবগাথায় আরেকটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করার মিশনে নামবেন। অধিনায়ক সাকিবের নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে আরও উজ্জীবিত দল।
নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পরই বাংলাদেশ দলের জন্য এক কোটি টাকা বোনাস ঘোষণা করেছে বিসিবি। ফাইনালে জিততে পারলে আরও বড় বোনাস অপেক্ষা করছে সাকিব-তামিমদের জন্য। তবে ভারতকে হারাতে বাড়তি প্রেরণার প্রয়োজন নেই বাংলাদেশ দলের। বাংলাদেশ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে ভারতও আজ চাপে থাকবে। প্রাথমিক পর্বে অবশ্য দু’বার বাংলাদেশকে হারিয়েছে তারা। কোহলি-ধোনিদের মতো মূল খেলোয়াড়দের ছাড়াই টানা তিন ম্যাচ জিতে ফেভারিটের মতোই ফাইনালে উঠেছে ভারত।
তবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ যে নতুন রূপ নিয়েছে, তাতে নির্ভার থাকতে পারছেন না দিনেশ কার্তিক। শনিবার কলম্বোয় ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা ভারতের এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জানালেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন যেকোনো ম্যাচই কঠিন। কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন কার্তিক, ‘উপমহাদেশের কন্ডিশনে বাংলাদেশ এখন খুবই ভালো দল। চাপ থাকবেই। সমস্যা হল, আমাদের সমর্থকরা ধরেই নেন বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা জিতব। জিতলে কোনো বাহবা নেই। কিন্তু হারলেই শুনতে হয়, ‘তোমরা বাংলাদেশের কাছে হেরেছ। কী করেছ তোমরা? আমি নিশ্চিত, এবারও তাই ঘটবে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সফল। শেষ ম্যাচটাও জিততে চাই। আমি নিশ্চিত, খুব ভালো একটা ম্যাচ হবে।’ সেই ভালোটা বাংলাদেশের জন্য শেষ ভালো হলেই হয়!