জাহাজের নাম ‘এমভি লিলাক এইচ’। ১ হাজার ৮১৮টি বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে জাহাজটি আসে জাপান থেকে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজটি ভেড়ে সন্ধ্যা ৭টায়; কিন্তু রাত ১০টা না বাজতেই এ জাহাজে থাকা সব গাড়ির শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে যায়! এত অল্প সময়ে এত বেশি গাড়ির শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কোনো নজির না থাকলেও ২০০৯ সালে বাজেটের আগের রাতে এমন কেলেঙ্কারি হয় চট্টগ্রাম বন্দরে!
গাড়ির ওপর বাজেটে আরোপিত নতুন শুল্ক হার এড়াতেই গাড়ি আমদানিকারকরা যোগসাজশ করে কিছু কাস্টম কর্মকর্তার সঙ্গে। স্বাভাবিকভাবে অফিস সময় ৫টা থাকলেও ওইদিন গভীর রাত পর্যন্ত খোলা ছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এমনকি নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহির্নোঙরে দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজে গিয়ে আমদানি সংক্রান্ত দলিলে ক্যাপ্টেনের স্বাক্ষরও সংগ্রহ করেন কাস্টম কর্মকর্তারা। আবার দ্রুত শুল্কায়ন কাজ সম্পন্ন করতে জাহাজ বাংলাদেশের জলসীমায় আসার আগেই সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের শিপিং অফিস থেকে নিয়ে রাখেন অনাপত্তি পত্র। নাবিক ও ক্রুদের তালিকা ঘষামাজা করে সংগৃহীত সে অনাপত্তি পত্র দিয়েই মাত্র তিন ঘণ্টায় শুল্কায়ন করা হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকার ১ হাজার ৮১৮টি গাড়ি!
এমন অপতৎপরতার কারণে ওই রাতে অন্তত ৭০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। কারণ স্বাভাবিক নিয়মে শুল্কায়ন হলে ১০ জুন বহির্নোঙরে আসা জাহাজটির শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হতো ১১ জুন। আর ১১ জুন শুল্কায়ন হলে গাড়ি আমদানিকারকদের শুল্ক দিতে হতো ওই অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত নতুন শুল্কহারে। উল্লেখ্য, ২০০৯-১০ অর্থবছরে আমদানিকৃত প্রতিটি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক গড়ে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। আর ‘এমভি লিলাক এইচ’ নামে ওই জাহাজে আনা হয়েছিল প্রিমিও, ফিল্ডার, টাউন এইচ, প্রাডো, মার্ক টু, ক্যামরি, ক্রাউন ও ভিসতা ব্র্যান্ডের গাড়ি।
সরকারকে রাজস্ববঞ্চিত করার এ কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে টাস্কফোর্সকে নির্দেশ দিয়েছিল এনবিআর; কিন্তু পরে অদৃশ্য কারণে এ বিষয়টি বাদ দিয়ে নতুন কর্মপরিধি ঠিক করে গঠন করা হয় টাস্কফোর্সের আরেকটি কমিটি। এ কমিটি ২০০৯ ও ২০১০ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে কাজ করলেও গাড়ি কেলেঙ্কারির বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কাস্টমের দুর্নীতি উদ্ঘাটনে দুদকের গঠিত তিন সদস্যের পৃথক আরেকটি কমিটি কাজ করলেও তাদের নজরও এড়িয়ে গেছে এ কেলেঙ্কারির ঘটনা।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তদন্ত টিমে থাকা দুদকের উপপরিচালক মলয় কুমার সাহা বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ দেশের বিভিন্ন কাস্টম হাউসে ২০১০ ও ২০১১ সালে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখব আমরা। তবে প্রয়োজন মনে করলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গিয়ে ২০০৯ সালে গাড়ি নিয়ে সংঘটিত দুর্নীতির ফাইলও চাইব আমরা। একই প্রসঙ্গে দুদকের কার্যক্রমে সমন্বয়ক হিসেবে থাকা এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (মূসক নিরীক্ষা) মসিউর রহমান বলেন, দুদক আপাতত ২০১০ ও ২০১১ সালে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্নীতির ফাইল চাইলেও প্রয়োজনে ২০০৯ সালের ১০ জুন খালাস হওয়া সেসব গাড়ির ফাইলও চাইতে পারে।