গরমে সুস্থ থাকতে… বৈশাখ শেষ হতে আর বেশি দিন নেই। আসছে জ্যৈষ্ঠ। এর মধ্যে সূর্যিমামার আস্ফাালন কমবে বলে মনে হয় না। তার প্রখর তাপদাহে ছেলে-বুড়ো সবাই হাঁসফাঁস করছেন অস্বস্তিকর গরমে। অনেকেই এ কঠিন গরম সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রাস্তায়। তাই সবাই যাতে সূর্যিমামার সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ থাকতে পারেন, তা সবারই কাম্য।
এ গরমে সবাই যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন, তার মধ্যে পানি স্বল্পতা (ডিহাইড্রেশন) অন্যতম। এ ছাড়া আমাশয়-জন্ডিসসহ বিভিন্ন ধরনের পেটের অসুখ তো রয়েছেই। তাই এ সময় শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবারই প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। দিনে ৬-৮ গ্লাস তো বটেই, এর বেশি হলেও ক্ষতি নেই! তবে এ সময় রাস্তাঘাটে অনেক ধরনের পানীয় পাওয়া যায়। সেগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই মঙ্গল। এ কর্মব্যস্ততার যুগে সবাইকে আধ-একটু বাইরে বের হতেই হয়। তাই কোনো রকম হেলাফেলা না করে একটি ছোট ব্যাগে অবশ্যই পানির বোতল ও ছাতা রাখা জরুরি। ছাতা শুধু বৃষ্টি থেকে বাঁচতেই নয়, রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে খুবই জরুরি একটি উপকরণ। ছাতা সূর্যের প্রখর খরতাপ থেকে ত্বক পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বক কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থাকে।
গ্রীষ্মে নিজেকে সুস্থ রাখতে খাবার-দাবারের দিকেও নজর দেয়া উচিত। তাই গ্রীষ্মকালীন ডায়েটে এমন সব খাবার রাখা উচিত, যা শরীর থেকে সব ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সক্ষম।
গ্রীষ্মকালকে অনেকে ‘মধুমাস’ বলে অভিহিত করেন। কারণ এ মৌসুমে বাজারে দেখা যায় অনেক ফলের সমাহার। আম, কাঁঠাল, বেল, তরমুজ, বাঙ্গি, ডাব এসবই গ্রীষ্মকালীন ফল। এসব ফল পানির ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি শরীরে খনিজ লবণের অভাবও দূর করে। যেমন বেলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকায় কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর হয়। গ্রীষ্মের আরেকটি উপযোগী ফল হলো তরমুজ। এর ৯৪ শতাংশই পানি, বাকিটুক চিনি। প্রতিদিনই খাবারের তালিকায় লেবু যোগ করা উচিত। ভিটামিন সির আধার এ লেবু। লেবুর রস ও মধু মেশানো উষ্ণ গরম পানিতে দিন শুরু করলে শরীর সারা দিনই সজীব থাকে। শরীরের অবসন্নতা দূর করতেও লেবুর শরবতের জুড়ি নেই! বীটমূলও খাওয়া যেতে পারে। বীটমূল শরীরে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ও ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণে সক্ষম। এ ছাড়া বীটমূলে রয়েছে ভিটামিন বি৩, বি৬, সি ও বিটা ক্যারোটিন। ফলের রাজা ‘আম’। আম খেতে পছন্দ করেন না এমন লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। তবে আম নিয়ে রয়েছে অনেক ভ্রান্ত ধারণা। অনেকেই মনে করেন আম খেলে পেট গরম হয়। কিন্তু এ ধারণা একদমই ঠিক নয়। ফ্যাটমুক্ত এ আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি ও তন্তু, যা শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য তরতাজা রাখতে সক্ষম। ভিটামিন ‘এ’-র আধার আম দিতে পারে জেল্লাদার ত্বক। এ ছাড়া ভিটামিন ‘এ’ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বককে সময়ের আগেই বুড়িয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। আমেও রয়েছে শরীরের অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন সি, যা হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। কাঁচা আমের শরবত খেতে সুস্বাদু, শরীরকে সুস্থ রাখার জন্যও ভালো। তাই যত পারা যায় আম খেলে ভালো। গরমকে প্রতিরোধ করতে ডাবের পানিও মোক্ষম অস্ত্র। প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রলাইটের উত্স এ ডাবের পানি। ডাবের পানি উজ্জ্বল ত্বকের জন্য দরকার। তাই এ গরমে প্রতিদিন ডাবের পানি পান করা উচিত। শসাও গ্রীষ্মের অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। ক্যালোরিশূন্য শসা শরীরের ইউরিক এসিড দূর করতে সাহায্য করে। এটি গরমে শরীরে উদ্ভূত নানা প্রদাহ দূর করতে সক্ষম। শসা, গাজর, বীট, লঙ্কা দিয়ে তৈরি সালাদ খেতে কার না ভালো লাগে! গরমে টক দইও খুব ভালো একটি খাবার। টক দই শরীরকে ঠাণ্ডা রাখার এক মোক্ষম উপাদান। এ গরমে কম তেল ও মসলাযুক্ত রান্না খাবার খাওয়া উচিত। এ মৌসুমে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, সজিনা ডাটা, পুঁই শাক, পাট শাকসহ আরও অনেক সবজি পাওয়া যায়। তার মধ্যে লাউ ও সজিনা ডাটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী দুটি সবজি। সজিনা ডাটা হার্টের জন্য খুবই ভালো। আর লাউয়ে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরে পানির অভাব দূর করে। দুপুরের আহারে অবশ্যই অবশ্যই তিতা করলা বা উচ্ছে রাখতে হবে। তিতা শরীরে রোগ প্রতিষেধক হিসেবে তো বটেই, ত্বককে নানান প্রদাহের হাত থেকে বাঁচায়।
good