বার্তা৭১ ডটকমঃ এবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বড় ঋণ খেলাপিদের তালিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংকের ওয়েবসাইটে, নোটিশ বোর্ডে বা অনুরূপ দৃশ্যমান স্থানে প্রকাশ করা হবে। এর সাথে প্রয়োজন হলে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপির ছবিও থাকবে ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের দৃশ্যমান স্থানে।
আগামী এক বছরের মধ্যে এ ধরনের তালিকা প্রকাশের জন্য সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীর কাছে চিঠি দেয়া হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ খেলাপিরা সমাজের প্রভাবশালী অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন। এদের নাম-ঠিকানা জনসমক্ষে প্রকাশ পেলে বিব্রত হওয়ার ভয়ে তারা ঋণ পরিশোধে এগিয়ে আসবে বলে অনেকে মনে করেন। বেশি সময় ধরে খেলাপি রয়েছে এমন ঋণগ্রহীতাদের সিংহভাগ সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তাই বড় ঋণ খেলাপিদের তালিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকাশ করা ও নিয়মিত হালনাগাদ করার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এরই অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বড় ঋণ খেলাপিদের হালনাগাদ তালিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংকের ওয়েবসাইট, নোটিশ বোর্ড বা অনুরূপ দৃশ্যমান স্থানে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা : চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায়’ নিয়ে সম্প্রতি আমাদের বিভাগে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কর্মশালায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন, ঋণ বিতরণ ও আদায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও প্রশিক্ষণ পর্ষদ সদস্যদের নিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আলোচনায় যে সুপারিশ করা হয়েছে তা স্বল্প , মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বল্প মেয়াদে সময়সীমা ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ এক বছর। মধ্য মেয়াদি এক থেকে দুই বছর এবং দীর্ঘ মেয়াদের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দুই বছরের ঊর্ধ্বে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। তার অনুমোদন পাওয়া গেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠানো শুরু করা হবে। এর আগে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০০ বড় ঋণ খেলাপির নাম সংসদে উত্থাপন করা হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা, জনতার পাঁচ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের পাঁচ হাজার ১১৫ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের সিংহভাগই রয়েছে ২০ বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির হাতে।
বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণের কারণে এই ব্যাংকগুলো এখন চরম মূলধন সঙ্কটে ভুগছে। এই মূলধন সঙ্কট এড়ানের জন্য ব্যাংকগুলো এবার সরকারের কাছে দুই হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। এর আগে গত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংক বেসিককে। এই ব্যাংককে মোট দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনালী ব্যাংকে। তাদের দেয়া হয়েছে তিন কোটি তিন হাজার টাকা।
একইভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণীকে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালীকে ৩১০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এ বছরের শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ চায়। সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা।
এই ব্যাংকটি ‘হল-মার্ক’ কেলেঙ্কারির কারণে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিও ‘অ্যাননটেক্স’ নামের একটি অখ্যাত গ্রুপকে নিয়মনীতি না মেনে পাঁচ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
দুর্নীতির কারণে আলোচিত অপর ব্যাংক বেসিকও মূলধন পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটি ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে। মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য রূপালী ব্যাংকের প্রয়োজন এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিশেষায়িত ব্যাংক বলে বিবেচিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এখাতে চেয়েছে যথাক্রমে সাত হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা এবং ৮০০ কোটি টাকা।