দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২২’ আইন সভার অনুমোদনের জন্য সংসদে উঠেছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ধার্য করা হারে অংশগ্রহণকারী চাঁদাদাতা নিরবিচ্ছন্নভাবে চাঁদা দেয়ার শর্তে তার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে আজীবন বা পেনশনে থাকাকালীন চাঁদাদাতার মৃত্যুজনিত কারণে তার নমিনিকে নির্দষ্ট সময় পর্যন্ত মাসিক হারে পেনশন দেয়া হবে।
২৯ আগস্ট, সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলে এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবে। এদের নিয়োগ করবে সরকার। বিলে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন নিয়ে এই কর্তৃপক্ষ নিজ নামে ঋণ নিতে পারবে।
খসড়া আইনে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হরেয়ছে। যার চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বাস অব কমার্সের সভাপতি এর সদস্য হবেন। পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।
বিলে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স হতে ৫০ বছর বয়সী সকল বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবে। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদেরও এর আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফা সহ জমার বিপরীতে পেনশন দেয়া হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে। একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন বলে বিলে বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
পেনশন তহবিলে জমা দেয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পাবে। যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়সীশার নিচের নাগরিকদের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করতে পারবে।
বিলে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা এই পেনশন ব্যবস্থার আওতা-বহির্ভূত থাকবে।
বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। তার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই আইনের খসড়া করা হয়।
সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে বিল
এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করার জন্য একটি বিল সংসদে তোলেন।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল-২০২২ তোলার পর সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
স্ব-শাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা নির্ধারণে অর্থ বিভাগের করণীয় সম্পর্কে বিধান স্পষ্ট করতে বিলটি আনা হয়েছে।