বার্তা৭১ ডটকমঃ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। সামরিক সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করেছেন তিনি। কোরীয় যুদ্ধ-পরবর্তী ৬৫ বছরে এই প্রথম উত্তরের কোনো নেতার পা পড়ল দক্ষিণে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কিম জং-উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন আজ শুক্রবার ঐতিহাসিক বৈঠকে বসেছেন। দুই দেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজমের পিস হাউসে এই বৈঠক চলছে। বৈঠকের আগে দুই নেতা হাসিমুখে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।
এর আগে সীমান্তের সামরিক সীমারেখায় কিমকে স্বাগত জানানো হয়। সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা ইম জং-সিউক গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। এই সম্মেলনে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও স্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তা নিয়ে বেশি আলোচনা হবে।
২০১১ সালে বাবার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় বসেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম। তাঁর নেতৃত্বে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপক বিকাশ ঘটিয়েছে।
গত বছর উত্তর কোরিয়া ষষ্ঠ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করে। যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র আছে বলেও দাবি তাদের।
পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ে গত জানুয়ারিতে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম।
ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিক শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই কোরিয়ার পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ট্রাম্প-কিম বৈঠকের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। এরই ধারাবাহিকতায় কিম-মুন বৈঠকের পর ট্রাম্প-কিম বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘদিনের বন্ধুরাষ্ট্র চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। গোপন সফরে চীন থেকে ফিরে কিমও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আপাতত পরমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
দুই কোরিয়ার নেতার বৈঠকের ব্যাপারে কোরিয়া ন্যাশনাল ডিপ্লোমেটিক একাডেমির অধ্যাপক কিম হাইয়ুন-উক বলেন, এ আলোচনা থেকেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন নয়। উত্তর কোরিয়া নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার যে দাবি দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে, এ ব্যাপারে কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, আগে তা দেখবে। সেটা নিয়ে ট্রাম্প-কিম বৈঠকে আলোচনা হবে। আলোচনা পাকাপোক্ত না হওয়ার আগে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া উত্তর কোরিয়ার জন্য সহজ হবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে সিউল কোরিয়া-যুদ্ধ সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে চাইছে। তবে এ ব্যাপারে বৈঠকে কী হতে পারে, তা নিয়ে কিছু বলেননি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা। তবে তিনি এটা নিশ্চিত করেছেন যে যুদ্ধের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই দেশে বসবাস করা স্বজনদের পুনর্মিলন নিয়ে আলোচনা হবে।