বার্তা৭১ ডটকমঃ বৃটেন যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে জটিল রাজনৈতিক আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক সে মুহূর্তে আরেকটা বোম ফাটালানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। আর তা ঠিক যেনো ট্রাম্পের মুখের উপর! বৃটেনের সানে দেয়া যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতকারের পাল্টা হিসেবেই বুঝি থেরেসা বললেন- ট্রাম্প তাঁকে পরমার্শ দিয়েছিলেন- ইউরোপীয় ইউনিয়নের নামে পারলে মামলা করেন কিন্তু কোনো সমঝোতায় যাবেননা।
দুই নেতার সর্বশেষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ছন্নছাড়া সম্পর্কের দিকটিই ফুটে উঠেছে।
শুক্রবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, কিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিষয়টি নিয়ে কাজ করা যায় সে ব্যাপারে তিনি বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীকে পরমার্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টিতে তাঁকে খুবি কঠোর দেখা গেছে। আসলে বিষয়টি কি ছিলো তা নিয়ে রবিবার বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতকার নেয় বিবিসি। বিষয়টি শোনার পর তা হাসিতে উড়িয়ে দিয়ে থেরেসা বলেন-“তিনি (ট্রাম্প) আমাকে বলেছিলেন, আমার উচিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মামলা করা। কোনাে ধরনের সমঝােতার মধ্যে যাবেন না, এদের বিরুদ্ধে মামলা করুন।”
মুখে হাসি নিয়ে থেরেসা আরো বলেন, “আসলে এমন কিছু আমরা করছি না। আমরা তাদের সঙ্গে সমঝোতার মধ্য দিয়েই এগুচ্ছি।”
সম্প্রতি বৃটেন সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থেরেসা মে’র নেতৃত্ব নিয়ে বেশ কিছু তীর্যক মন্তব্য করে বসেছেন। বিশেষত উল্লেখ করার মতো ঘটনা হল ব্রেক্সিট সমঝোতা নিয়ে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ প্রসঙ্গে করা মন্তব্য।
থেরেসা যখন ট্রাম্পকে ব্ল্যাক টাই ডিনারে মুখরোচক আপ্যায়নে ব্যস্ত সে সময়ে বৃটিশ দৈনিক দ্য সান এক বিস্ফোরোণ্মুখ সাক্ষাতকার প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাক্ষাত্কারে বলেন, বৃটেনের নেতারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এমন একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে চায় যার কোনো সম্ভাবনাই দেখিনা। শুধু তাই নয় ট্রাম্প আরো বলেন, কিভাবে ব্রেক্সিট নিয়ে সমঝোতা করতে হবে তাও বলেছিলাম থেরেসা মে’কে। কিন্তু তিনি আমার কথায় কান দেননি।
সাক্ষাতকারে ব্রেক্সিট ইস্যুতে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করা বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনেরও তারিফ করেছেন ট্রাম্প। জনসন খুব ভালো প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্যে বৃটেনের বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষও মর্মাহত হয়েছেন। যখন থেরেসা ব্রেক্সিট নিয়ে টালমাটাল একটা পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন, যেখানে নিজেও সংকটে ভুগছেন, সে পরিস্থিতিতে এমন মন্তব্য অনেকটা ‘মরার উপর খরার ঘা’ । ব্রেক্সিট নিয়ে থেরেসার কনজারভেটিভ সরকার দু-ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
দ্য সানে প্রকাশিত সাক্ষাত্কারটি খন্ডিত প্রকাশ বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বলেছেন ‘ফেইক নিউজ’। আর সুর নরম করে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি থেরেসাকে একজন অবিশ্বাস্য রকমের স্মার্ট প্রধানমন্ত্রী ও যোগ্য বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, বৃটেনের জনগণের জন্য বিশাল কাজ করে যাচ্ছেন থেরেসা মে।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক খুবি দৃঢ়। আর ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে বলেন, এটা থেরেসা মে’র উপর নির্ভর করে তিনি কিভাবে তা সমর্থন করবেন, যুক্তরাষ্ট্র তাতে পাশে থাকবে।
কোন বিষয়ে মামলা হবে, কি তার উদ্দেশ্য বা কিভাবে তা মোকাবেলা করা যেতো-তা নিয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বিবিসির ওই সাক্ষাত্কারে বিস্তারিত কিছু বলেননি। বৃটেনের উচ্চকক্ষে বাণিজ্য এবং শুল্ক নীতি নিয়ে আসন্ন ভোটকে সামনে রেখে দলের ব্রেক্সিট বিরোধীদের সতর্ক করেছেন থেরেসা। বৃটিশ প্রধনামন্ত্রী বলেছেন, ব্রেক্সিট পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ালে তা বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে।
মেইলে লেখা এক কলামে থেরেসা বলেন, “অর্জনের দিকে আমাদের দৃষ্টি রাখা উচিত। আর যদি সেটা না করতে পারি, তাহলে কাজ কিছুই হবে না, ব্রেক্সিট ভেস্তে যাবে।”