বার্তা৭১ ডটকমঃ ৫৭ সদস্য রাষ্ট্রবিশিষ্ট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠক থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় আইনি লড়াইয়ের জন্য তহবিল সংগ্রহ, ইসলামোফোবিয়া ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম রাষ্ট্রদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে আরব রাষ্ট্রসমূহের নীতির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। খবর বাসসের।
বৈঠকের বিষয়ে ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত ওআইসির সদস্য দেশগুলোর প্রতি রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এ আহ্বান জানান।
সম্মেলনে তিনি তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে আরও সুসংহত পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন । রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী ‘ইসলামোফোবিয়ার’ বিষয়টি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের কার্যকরভাবে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানান। ওআইসির সদস্য দেশগুলোর জন্য করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা, অর্থনীতি পুনর্নির্মাণের জন্য সদস্য দেশগুলোর আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সদস্য দেশগুলোর জন্য মানবিক সহায়তার ওপরও জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়ার কথা থাকলেও তিনি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ায় এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন রাষ্ট্রদূত ড. জাবেদ পাটোয়ারী।
ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওতাইমিন কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টারের (সিএফএম) ৪৭তম বৈঠক শেষে শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি নয়, ঐক্য ও সংহতির উপর জোর দিয়েছি। আমরা একে অপরকে সম্মানের পথে চলার চেষ্টা করছি। বাক স্বাধীনতার মানে আপনি ধর্ম সম্পর্কে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারেন না।
পরস্পরের মতামতের প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ইসলামের অংশ নয়, অন্য ধর্ম বা সংস্কৃতি নিয়ে ইসলামের কোনো সমস্যা নেই। ইসলাম নারী ক্ষমতায়নকে সম্মান করে ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষা দেয়।
তিনি বলেন, যদি কোনো খারাপ মানুষ ইসলামের নামে অনৈতিক কাজ করে, তবে তারা ইসলামকে নয়, কেবলমাত্র নিজেদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের এই খারাপ কাজের দায় ইসলামের নয়। এসময় ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলামোফোবিয়া’র (ইসলাম আতঙ্ক) সাম্প্রতিক উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ওআইসি ইতোমধ্যেই আইসিজে-তে দায়ের করা মামলায় গাম্বিয়াকে আর্থিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহে একটি বিশেষ অ্যাকাউন্ট (হিসেব) খুলেছে। সংস্থাটি আরো তহবিল প্রদানের জন্য এর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ওআইসিকে ৫ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করেছে বলে সিএমএফে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।
ওআইসি মহাসচিব বাংলাদেশসহ যেসব দেশ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) দায়ের করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে গাম্বিয়াকে ইতোমধ্যেই আর্থিক সহায়তায় দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে ওআইসি মহাসচিব বলেন, বিগত ৭২ বছর ধরে এই সংকট চলছে। আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।