বার্তা ৭১ ডটকমঃ বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদীরা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, মানবতাবাদী, নাস্তিক লেখক, ব্লগার, ও সমাজকর্মীকে হত্যা করছে। মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, নির্মমভাবে আহত হন তার স্ত্রী ও মুক্তমনা লেখক বন্যা আহমেদ। হত্যার পরে ইসলামি জঙ্গীগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং পরে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। দেশে ও বিদেশে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠলেও এই মধ্যযুগীয় বর্বরতার নিন্দা জানানো দূরের কথা কোনরকম প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত থাকে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দাবি করা বাংলাদেশ সরকার। একইভাবে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়তার পথ ধরে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীরা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে!
বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে রাতের অন্ধকারে হত্যার পর খুনীরা থেমে যায়নি। বরং বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে খুনীরা সাথে সাথেই শুরু করে দেয় পরবর্তী খুনের পরিকল্পনা।
অভিজিৎ রায় হত্যার পর হত্যা করা হয় নাস্তিক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। খুন করে পালিয়ে যাবার সময়ে সাহসী পথচারীদের ভূমিকায় দুইজন হত্যাকারী ধরা পড়ে। হত্যায় অংশ নেওয়া দুইজনের বরাতে জানা যায়, তারা কখনই বাবুর লেখা পড়েনি, বাবু সম্পর্কে জানত না। হুজুরের নির্দেশে তারা বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ দুইজন আক্রমণকারীকে হাতে পেয়েও হত্যার সাথে জড়িত, মূল পরিকল্পনাকারীদের সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে সফল হয়নি। হত্যা করা হয় মুক্তমনা ব্লগার, সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাশকে। হত্যাকারীরা অনন্ত বিজয়কে জনসমক্ষে প্রায় পাঁচশ মিটার তাড়া করে বাসার নিকটস্থ পুকুর পারে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
অনন্ত হত্যার পর ঢাকায় গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ফেরার পথে মুক্তমনা লেখক, গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে (“নিলয় নীল”) অনুসরণ করে ইসলামি মৌলবাদীদের একটি দল। বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশকে জানালেও পুলিশ দায়িত্ব এড়াতে একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) পর্যন্ত গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে জঙ্গিরা নীলাদ্রির বাসায় ঢুকে তার সঙ্গী ও সঙ্গীর ছোটো বোনকে অস্ত্রের মুখে আটক করে তাকে আরেক ঘরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
শুধু নাস্তিক লেখক নয় এই মৌলবাদীদের হাতে গত কয়েক বছরে খুন হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক থেকে শুরু করে প্রগতিশীল আরো কয়েকজন মানুষ। জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ডের অর্থায়নের জন্য আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ব্যাংক ডাকাতি পর্যন্ত করেছে, এবং ডাকাতির সময় ব্যাংকের ম্যানেজার সহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে।[১] এছাড়া ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামের একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলী রাণী দেবীকে হত্যাও তারাই করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।[২] হত্যার পাশাপাশি সর্বসাধারণ্যে ভয় জাগানোর জন্য এবং নিজ কর্মীদের ও উগ্র-মুসলমানদের উৎসাহ দেয়ার জন্য জঙ্গীরা নিয়মিত নতুন নতুন তালিকা ও হত্যার হুমকি প্রকাশ করে যাচ্ছে। নীলাদ্রি হত্যার পর ইত্তেহাদুল মুজাহিদিন নামক একটি জঙ্গীগোষ্ঠীর নামে ১৯ জনের একটি নতুন তালিকা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়; তালিকাটিতে প্রথমেই ছিল নীলাদ্রি’র নাম যা লাল কালি দিয়ে কাটা।
ধর্মানুভূতি ও বাক্স্বাধীনতা প্রসঙ্গে
বাংলাদেশের ইতিহাসে বাক্স্বাধীনতার উপর সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মানুভূতি এবং বাক্স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মুক্তমনার অবস্থান আবারো স্পষ্ট করে তুলে ধরা উচিত বলে আমরা মনে করি। আমরা ধর্মানুভূতিকে অন্য আট দশটা অনুভূতির মতোই মনে করি, এবং অন্য অনুভূতির মতো এটাকে আহত করাও ন্যায্য মনে করি। বাংলাদেশের তথাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সরকার যখন ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ২০১২ সালে একটি ওয়েবসাইট ও কয়েকটি ফেসবুক পাতা বন্ধ করে দিয়ে বর্তমানের এই ভয়ংকর সময়ের সূচনা করে তখন মুক্তমনা সম্পাদক অভিজিৎ রায় ধর্মানুভূতি প্রসঙ্গে লিখেছিলেন:
“পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যার সমালোচনা হয় না। ছাত্রদের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে কোন ঐতিহাসিক ভয় পান না এই ভেবে যে, চেঙ্গিস খানের সমালোচনা করা যাবে না, পাছে ‘চেঙ্গিসানুভূতি’ আহত হয়! কেউ ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে ভাবেন না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের অত্যাচারের কথা কিংবা জাপানী বর্বরতার কথা অথবা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর নৃশংসতার কথা বলা যাবে না। কেউ বলেন না, এতে করে কারো ইতিহাসানুভূতিতে আঘাত লাগছে, মামলা করে দেবে! প্রথম আলোর মত পত্রিকা যখন বিজ্ঞানের নামে আগডুম বাগডুম পরিবেশন করে, আমরা বলি না আমরা আদালতের শরণাপন্ন হব, আমাদের বিজ্ঞানুভূতি বিপন্ন। অথচ ধর্মের ক্ষেত্রে সব কিছু হয়ে যায় ব্যতিক্রম। ধার্মিকদের ভঙ্গুর অনুভূতি সামান্যতেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ধর্মযুদ্ধের নামে বিধর্মীদের উপর কি ধরণের অত্যাচার করা হয়েছিলো তা বললে তাদের ধর্মানুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, পয়গম্বর-নবী-রসুল আর ধর্মের দেবদূতদের অমানবিক কার্যকলাপ তুলে ধরলে ধর্মানুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, নারীদের অন্তরিন করে তাদের অধিকার হরণ করা হয় তা বললে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, ধর্মগ্রন্থ গুলোতে বর্ণিত অবৈজ্ঞানিক আয়াত বা শ্লোক তুলে ধরলেও তারা আহত হন। আর ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করা হলে তো কথাই নেই; ঈশ্বর যে ‘খুঁটি ছাড়া আকাশকে ছাদ স্বরূপ ধরে রাখেন’ তা যেন চৌচির হয়ে তাদের মাথায় তৎক্ষণাৎ ভেঙ্গে পড়ে। ধর্ম সব সময়ই কৌতুকের বড় উৎস হলেও ব্যঙ্গ এবং কৌতুকবোধের ব্যাপারটা ধার্মিকদের সাথে সবসময়ই কেন যেন রেসিপ্রোকাল। অথচ, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি চলচ্চিত্র, খেলাধুলা বা অন্যান্য যাবতীয় বিষয়কে সমালোচনা, ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতে তাদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কেবল ধর্মের বেলাতেই গণেশ উল্টে যায় বরাবরই।”
ধর্মানুভূতিতে আঘাত বা ধর্মকে সমালোচনা করার অধিকার দেয়া তো দূরের কথা, বাংলাদেশ সরকারের চাপাতিধারী জঙ্গীদের উগ্রতার সাথে নাস্তিকদের ধর্মসমালোচনামূলক লেখাকে সমান করে দেখে হত্যাকারীদের অপরাধ লঘু করার চেষ্টা করছেন যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতাকে আমরা যেমন কঠোরভাবে সমালোচনা করছি, ধর্মসমালোচকদের বিচারের আওতায় আনার সরকারি চেষ্টাকেও আমরা তেমনি কঠোরভাবে সমালোচনা করছি। ধর্ম কেন যেকোনো কিছুর সমালোচনা এবং সার্বিকভাবে বাক্স্বাধীনতা প্রশ্নে মুক্তমনা সবসময়ই আপোষহীন। যে কারো যেকোনো আদর্শ, ধর্ম, মতামতকে সমালোচনা করলে বা কথা ও লেখার মাধ্যমে কারো অনুভূতিকে আহত করলে তাতে কখনোই কারো ক্ষতি হয় না। কিন্তু কাউকে হত্যা করলে, বা কারো সর্বজনীন-মৌলিক-মানবাধিকার হরণ করলে তাতে তার সরাসরি-ক্ষতি হয়। এমনকি অবৈধ তো দূরের কথা ধর্মের যাদৃচ্ছিক সমালোচনা বা ব্যঙ্গ প্রায় কখনোই কারো সরাসরি ক্ষতিরও কারণ হতে পারে না। কোনো ধরণের অনুভূতিতে আঘাত কোনো সরাসরি ক্ষতির মধ্যে তো পড়েই না, এমনকি স্রেফ ক্ষতির মধ্যেও পড়ে না। অনুভূতি আহত হলে কেউ সেটা বলতে পারেন, কলমের জবাব কলম দিয়ে দিতে পারেন, তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারেন, কিন্তু সেটার জন্য মামলা ঠুকে দিতে পারেন না, হত্যা তো কোন সমাধান হতে পারে না। আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমাদের মানবসভ্যতার মূল্যবোধ যেখানে এসে পৌঁছেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এসব মধ্যযুগীয় আইনকানুন এবং দমননীতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
লেখকঃ মোঃ রাসেল মজুমদার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
তোর উপরে শয়তান ভর করছে, তোর ঝাড়ফুঁক দরকার, ইসলামিক দেশ এ মুসলমান পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ এর ধার্মিক মুসল্লিদের বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করলে এই দেশের মুসলমান সমাজ তোকে বয়কট করবে।
ভাই, আপনিতো আর মুসলমান নাই, মুসলমান হয়ে অমুসলিমদের সাথে চলাফেরা করতে চান, হিন্দুদের সাথে উৎসব করতে চান, এসব নাজায়েজ কাজ করা ইসলাম সমর্থন করে না। আপনাদের মত মুসলমানদের কারনেই আজকে মুসলমানদের এত দুর্দশা, বদনাম।