বার্তা৭১ ডটকমঃ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খানের বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকা থেকে খন্দকার মোশতাকের নামও কাটা পড়ছে।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্তগুলো সুপারিশ আকারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সাবেক মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার সদস্য শাজাহান খান এমপি। মঙ্গলবার বিকালে তিনি বলেন, ‘জামুকার বৈঠকে জিয়াউর রহমান, শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খানের নামে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকা থেকে খন্দকার মোশতাকের নাম বাতিল করা হয়েছে।
এ ধরনের আরো ব্যক্তির নাম পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে বাদ দেয়া হবে।’ এছাড়া এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ও গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বহালের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াহিদুর রহমান ও হাফিজুর রহমান মুন্সীর গেজেট ও সনদ বাতিল করেছিল মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট অনুসারে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘বীর উত্তম’, শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’, নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান ‘বীর প্রতীক’ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকায় ছিল খন্দকার মোশতাকের নাম।
এদের মধ্যে শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।
এসব খুনির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করলেও রাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের মর্যাদা বাতিল করেনি। গত বছরের ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জামুকার সভায় বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করার সুপারিশ করলে ৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জামুকার বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিল করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামুকার সদস্য মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নামের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের খেতাব থাকতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তাদের খেতাব বাতিল করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরো বৈঠক হবে, সভার কার্যবিবরণী সই হওয়ার পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয়। তাই এ নিয়ে এখনি কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
খেতাব বাতিলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ওয়াকার হাসান বলেন, ‘রোহিঙ্গা গণহত্যার কারণে মিয়ানমারের নেত্রী সুচির নোবেল খেতাব কেড়ে নেয়া হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে এ ধরনের আরো নজির রয়েছে। তাহলে জাতির পিতার হত্যাকারীদের নামের সঙ্গে কেন বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব থাকবে?
জামুকার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘দেরিতে হলেও জামুকা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আমরা স্বাগত জানাই। শুধু মুক্তিযুদ্ধের খেতাব ও সনদ বাতিল করলেই হবে না। তাদের নামে দেশে কোনো ধরনের স্থাপনা, রাস্তাঘাট বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও তা বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি রাজাকারদের চিহ্নিত করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। রাজাকারদের সম্পদ অসহায় দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।’