বার্তা৭১ ডটকমঃ টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের এপিবিএন চেকপোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কারান্তরীন প্রধান আসামি ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ অভিযুক্ত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছে আদালত।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। একই সময়ে ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেবের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে চার্জগঠনে (বিচার কাজ শুরুর প্রক্রিয়া) ধার্য্যদিন হিসেবে রবিবার (২৭ জুন) সকালে ওসি প্রদীপসহ সকল আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বেলা সাড়ে ১০টায় সিনহা হত্যায় অভিযুক্তদের কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এজলাসে আনা হয়। প্রিজন ভ্যান থেকে আসামিদের নামানোর সময় স্বজনদের কান্নার রুল পড়ে। কঠোর নিরাপত্তায় কাঠগড়ায় তোলা হয় ১৫ আসামিকে।
পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, ২৭ জুন আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলার চার্জগঠনের জন্য ধার্য্যদিন ছিল। সে মতে সকালেই আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/১১৪/১২০(খ)/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করে আদালত। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে ২৬-২৮ জুলাই স্বাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
পিপি আরও বলেন, মামলায় অভিযুক্ত বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, কনস্টেবল সাগর দেব ও বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতর পক্ষের আইনজীবীরা ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫(গ) ধারায় মামলার দায় হতে অব্যাহতি ও জামিনের আবেদন করলেও আদালত শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করেন।
সাবেক ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দদুলালের জামিন চেয়ে গত ১০ জুন আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই দিন আদালতে নথি উপস্থাপন না হওয়ায় শুনানি হয়নি। ১৩ জুন এ নিয়ে পুনরায় আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানির জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত কনস্টেবল সাগর দেব গত ২৪ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তার জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেছিলেন।
সিনহা হত্যা মামলায় (এসটি-৪৯৩/২১) চার্জগঠন শুনানিতে আসামি পক্ষে আইনী লড়াই করেন- কক্সবাজার বারের অ্যাড. দিলীপ দাশ, মহি উদ্দিন খান, মোবারক হোসেন আর চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন অ্যাড. রানা দাশগুপ্ত, অ্যাড. চন্দন দাশসহ ১০-১২ জনের একটি আইনজীবী প্যানেল।
রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম ও বাদীর পক্ষে অ্যাড. মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক পিপি অ্যাড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাখেদ খান। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়েছে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীকে প্রধান করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাবকে। এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
পরবর্তীতে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের করা মামলার তিনজন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ ছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেফতার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।
মামলায় কারান্তরিণ ১৪ আসামিকে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব ছাড়া বাকি ১২ জন আসামি আদালতে ঘটনার বিষয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উক্ত মামলায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। মামলায় অভিযুক্ত কনস্টেবল সাগর দেব দীর্ঘ ১১ মাস পলাতক থাকার পর ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর নির্ধারিত দিন হিসেবে চার্জগঠন শুনানিতে সকল আসামীকে ২৭ জুন আদালতে হাজির করা হয়।