বার্তা৭১ ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় সেজান ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার (৯ জুলাই) ঘটনাস্থল থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকালে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এ সময় কারখানার ৭ তলা ভবনে আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট একযোগে চেষ্টা চালিয়েও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন জানান, এখন পর্যন্ত কারখানার ভেতর থেকে ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতদের বেশিরভাগই শিশু শ্রমিক। পরিচয় শনাক্তের জন্য মরদেহগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ শাহ-আলম বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে কারখানার চারতলায় আবারও আগুন বাড়তে থাকে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ১ থেকে ৪ তলার মধ্যে ৪৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৫ ও ৬ তলায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখনো প্রবেশ করতে পারেনি। ওই দুই তলায় আরও মরদেহ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার পর ওই কারখানায় আগুন লাগে। রাত ৯টার দিকে তিনজনের মৃত্যুর খবর আসে।
গতকাল প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিলেন, হাশেম ফুডস লিমিটেডের ৭ তলা ভবনের নিচ তলার একটি ফ্লোরে হঠাৎ করে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সময়ের সাথে সাথে আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় গোটা কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। এ সময় ঘটনাস্থলেই স্বপ্না রানী ও মিনা আক্তার নামে দুই নারী শ্রমিক নিহত হন। পরে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মোরসালিন (২৮) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
প্রাণে বাঁচতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন অনেকে। লাফিয়ে পড়ে আহত হওয়া অন্তত ছয়জনকে গতকাল ঢামেকে ভর্তি করা হয়।
আগুন লাগার পর থেকেই শঙ্কা ছিল কারখানার ভেতর অনেক শ্রমিক হয়তো আটকা পড়েছেন। রাত ৯টার দিকে দেখা যায়, ভবনের সামনে ও পেছন দিক থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বেশি ও প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না।
কারখানাটির সপ্তম তলায় একটি কেমিক্যাল গোডাউন ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। এই গোডাউনের কারণে আগুনের ব্যাপকতা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।