ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২টি মামলা করা হয়েছে। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ৬৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। এজন্য ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিংসেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাটযোগ্যসেবা প্রদান করার পরও প্রতিষ্ঠানটি এখনো ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
তিনি জানান, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সারের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটির ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তদন্তকালে গ্রামীণ ব্যাংকের এসব অনিয়ম বের হয়।
রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেবার কোড এস ০৫৬-এর আওতায় ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিংসেবা প্রদান করে আসছে। কিন্তু ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি এখনো নিবন্ধন গ্রহণ করেনি।
তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানটি সিএ ফার্ম কর্তৃক প্রত্যায়িত বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিল করা অন্যান্য দলিলাদি আড়াআড়ি যাচাই ও পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তদন্ত টিম। এছাড়া তদন্ত চলাকালীন প্রতিষ্ঠানের একাধিকবার আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন তথ্যাদি ও বক্তব্য আমলে নেয়া হয়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে দেয়া বিভিন্ন সেবা থেকে পাওয়া আয়ের বিপরীতে ৩৪ হাজার ৯১০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯০ টাকা উদঘাটন করা হয়। ভ্যাটযোগ্য সেবা হতে পাওয়া আয়ের বিপরীতে এ অপরিশোধিত ভ্যাটের ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ শতাংশ হারে ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৬ টাকা সুদ প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন খরচের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট বাবদ আট কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির উৎসে কর্তন বাবদ প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার ০৭৪ টাকা। এতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৬ টাকা উদঘাটন করা হয়। এ অপরিশোধিত ভ্যাটের ওপর ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসিক ২ শতাংশ হারে সাত কোটি ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৭ টাকা সুদ প্রযোজ্য হবে।
এ মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৪৫ কাটি ৭৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৬ টাকা এবং সুদ বাবদ ২১ কোটি ২৩ লাখ ২২ হাজার ৬৮৩ টাকাসহ সর্বমোট ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ৬২৯ টাকা ভ্যাট পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। এ টাকা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব হিসেবে আদায়যোগ্য।
নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, পরিহার করা রাজস্ব আদায়ের আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও অনিয়মের মামলা সংশ্লিষ্ট ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাতে প্রতি মাসে সব আয় ও ক্রয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করে, তা মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।