বার্তা৭১ ডটকমঃ বিরোধী মত ও শক্তিকে কষ্ট দেয়া, জুলুম করা আওয়ামী লীগের স্বধর্ম মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, গায়েবী মামলার ছড়াছড়িতে সারাদেশে বিরাজ করছে এক আতঙ্কের পরিবেশ। মামলার ব্যাপক বিস্তারে সরকার যেন জনগণের ওপর প্রেতাত্মাসূলভ আচরণ করছে। মূলত: এদেশে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বরকত নেই, আছে শুধু মিথ্যা মামলার বরকত।
রবিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত তিন চার দিনে রাজধানীর দুটি থানায় ৭টি মামলা করা হয়েছে, এসব মামলায় বিএনপির আইনজীবীসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ১৫ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়াসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে এই ভিত্তিহীন মামলাগুলো করা হয়েছে খিলগাঁও, রামপুরাসহ বেশ কয়েকটি থানায়। এ ছাড়াও বরগুনার পাথরঘাটায় ৪০ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে। সারা দেশব্যাপী প্রায় ১৬ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে রিজভী আহমেদ বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য করার পর সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থে এসকে সিনহার প্রতি সরকারের আচরণের যে ঘটনাগুলো বেরিয়ে আসছে তাতে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যই সাবেক প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন। আর এটি করতে গিয়ে বিশ্বদরবারে শেখ হাসিনা কলঙ্কিত হয়েছেন। এই ঘটনা বিচার বিভাগের ওপর ব্যক্তি শেখ হাসিনার ভয়ঙ্কর আক্রমণ। বিচার বিভাগের ওপর আধিপত্য বিস্তারই এই আক্রমণের মূল লক্ষ্য। সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দিতে যাচ্ছেন। গণতন্ত্রের মুখোশটুকু ছুঁড়ে ফেলে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্ন মুছে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করার জন্য সরকার এহেন অমানবিক পদ্ধতি নেই, যা তারা ব্যবহার করে না। আমরা এরই চরম প্রকাশ দেখতে পায়- ২১শে আগস্ট বোমা হামলা মামলায় দীর্ঘদিন পর অধিকতর তদন্তের নামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়ানোর ঘটনায়। এর পূর্বে দুইবার চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম ছিল না। শুধু প্রতিহিংসা পূরণের জন্য টার্গেট করেই সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম উক্ত মামলায় জড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বেপরোয়া ক্ষমতার আস্ফালনে আইন আদালতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহার আকন্দ কর্তৃক তথাকথিত নিখুঁত ও গভীর তদন্ত কার্যক্রম চালাতে গিয়ে সরকারি অনেক দলিল দস্তাবেজ হয় গায়েব অথবা সৃজন পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন- বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরেও তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ‘কেনো পুলিশকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে সভাস্থল পরিবর্তন করা হলো, সে বিষয়ে কে বা কারা সম্পৃক্ত’ (অর্থাৎ মুক্তাঙ্গণ থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ)-এই মূল্যবান তথ্যটি উদঘাটনের ক্ষেত্রে তিনি বিন্দুমাত্র মনোযোগ দেননি। বরং এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেই তিনি ক্ষেপে যেতেন বলে শোনা যায়।’
রিজভী আরো বলেন, ২১শে আগস্ট বোমা হামলায় একটি রহস্যাবৃত ঘটনা বোমাবাজী শুরু হওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত নেতাকর্মীরা নেত্রীকে ঘিরে ধরে তাকে তার বুলেটপ্রুফ জিপে উঠিয়ে দেয়। ওই সময় জীপকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। সেই গুলিতে তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, প্রাক্তন সেনা সদস্য মাহবুব নিহত হয়। বুলেটপ্রুফ জীপটির জানালার কাঁচ ভেঙ্গে যায়। গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে যায়। ওই অবস্থায় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ধানমন্ডির ৫ নং রোডের সুধাসদনে পৌঁছে দেয়া হয়। শেখ হাসিনার দেহরক্ষী, প্রাক্তন সেনা হাবিলদার মাহবুব কার গুলিতে মারা গেলেন তা নিরুপণে এসপি কাহারের কোনো আগ্রহ-তৎপরতা যেমন পরিলক্ষিত হয়নি, তেমনি বুলেটপ্রুপ গাড়ির গ্লাস কিসের আঘাতে ভেঙ্গে গেল বা এমন ওজনবিশিষ্ট কোনো গাড়ি পাংচার টায়ার নিয়ে কংক্রীটের রাস্তার ওপর দিয়ে ৫ কিলোমিটার চালিয়ে ধানমন্ডির সুধাসদনে পৌঁছলো তাও পর্যালোচনা করা হয়নি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনারই দাবি করা আন্তর্জাতিক তদন্ত অনুষ্ঠানকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই দল ঘটনাস্থল সরেজমিনে তদন্তের পর যখন সেই গাড়ীটি পরিদর্শন করতে চেয়েছিলো, তা পরিদর্শন করতে দিতে শেখ হাসিনা অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেনো এই অস্বীকৃতি? তারও কোনো সুরাহা কাহার আকন্দের তদন্তে হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এফবিআই দলকে তদন্ত সহায়তা না করায় অবশেষে তারা তাদের তদন্তকার্য অসমাপ্ত রেখেই ফিরে চলে যায়।
রিজভীর আহমেদের অভিযোগ, ২১শে আগস্ট বোমা হামলার পুরো বিষয়টাই একটি প্রহেলিকা। আওয়ামী রাজনীতির কুটিল পাটিগণিত। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার দেশীয় ও বৈদেশিক চক্রান্তের বিপজ্জনক ব্লুপ্রিন্ট। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার নানাবিধ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ২১শে আগস্ট বোমা হামলা মামলায় সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আইন আদালতকে। কারণ আইন আদালত এখন সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতের মুঠোয়।
রিজভী সারাদেশে গ্রেফতার প্রসঙ্গে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় মোবারকপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: তৌহিদ মিয়া কোর্টে চালান দেয়। মো: মোখলেছুর রহমান সহ-সভাপতি বিনোদপুর ইউনিয়ন। মো: আ: মালেক প্রচার সম্পাদক লাভলা ইউনিয়ন শিবগঞ্জসহ মোট ৫০ জনের অধিককে গ্রেফতার করে ওসি শিকদার মশিউর তাদের উপর নির্যাতন চালায়। মেহেরপুরে মো: আ: সবুর জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক দল। মো: আ: ছালাম বিএনপি নেতাসহ ৪ জন গ্রেফতার। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল মজিদ, থানা ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান হিটলু ও মাহমুদ পাঠান বিপুলকে গতকাল ভৌতিক মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আযম খান, আবুল খায়ের ভুইয়া, এবিএম মোশারফ হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।