আইপিএলে ঘটে গেছে চাঞ্চল্যকর কেলেঙ্কারি। মুম্বইয়ের ওকউড প্রিমিয়ার হোটেলে এক উন্মাতাল পার্টিতে যৌনাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় রোববার রাতে । সেখানে ছিলেন আইপিএলে অংশ নেয়া পুনে ওয়ারিয়র্সের দুই খেলোয়াড়, বলিউড মাতানো কয়েকজন নারী সেলিব্রেটি, কিছু বিদেশী। পার্টিতে যখন সবাই উত্তাল হয়ে পড়েন তখন সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সেই অভিযানে দুই খেলোয়াড় ওয়েইন পারনেল ও লেগ-স্পিনার রাহুল শর্মা, বলিউডের নারী সেলিব্রেটি, বিদেশী সহ আটক করা হয় প্রায় ১০০ জনকে। পারনেল ও রাহুল শর্মার রক্তের ও প্রস্রাবের কিছু নমুনা সংগ্রহ করার পর গতকাল তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রাহুল শর্মা দাবি করেছেন, তিনি জানতেন না যে ওই পার্টি ছিল যৌন উসকানিতে ভরপুর। তাকে সেখানে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল জন্মদিনের পার্টির কথা বলে। এ জন্য তিনি ওয়াইন পারনেলকে সঙ্গে নিয়ে যান। তাদেরকে আটকের ওই দৃশ্য রোববার দিবাগত রাত ১ টার দিকে টেলিভিশন চ্যানেল জি-নিউজ ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করতে থাকে। তাতে দেখানো হয়- আটক বলিউড সেলিব্রেটিসহ যুবতীদের। এ সময় তাদের কেউ কেউ পরেছিলেন চোস্ত প্যান্ট। কেউ কেউ ছিলেন মিনি স্কার্ট পরা। তাদের অনেকেই ছিলেন বেসামাল, স্বল্পবসনা। টেলিভিশনের ফুটেজে দেখানো হয়- পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় ওইসব সেলিব্রেটি হাতে থাকা পার্স দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন। কেউবা মাথার চুল এলিয়ে এনে মুখ ঢাকার চেষ্টা করেন। ফলে তারা কারা তা সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। মিডিয়া তাদের নামও প্রকাশ করেনি। একই অবস্থা হয় ওয়েইন পারনেল ও রাহুল শর্মাসহ আটক পুরুষদের। তারাও দু’হাতে মুখ ঢেকে ওঠেন পুলিশের ভ্যানে। তাদের কেউ হাতে থাকা রুমালে মুখ ঢেকে কোনমতে দু’চোখ খোলা রাখেন, যাতে রাস্তা দেখা যায়। এ নিয়ে গতকাল ভারতের মিডিয়াগুলো ফলাও করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে একটি অনলাইন ট্যাবলয়েড দৈনিকের শিরোনাম- ‘আইপিএলের আরেকটি লজ্জা: জুহুতে রমরমা পার্টি থেকে পুনে ওয়ারিয়র্সের ২ খেলোয়াড় আটক’। এতে বলা হয়, পুলিশ ওই পার্টিতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ১১০ গ্রাম কোকেন। এতে লেখা হয়েছে- যখন আমরা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) ৫ম মওসুমের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি তখনই আরেকটি লজ্জাজনক ঘটনা ঘটে গেল। এতে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়। রোববার শেষ রাতে ওকউড হোটেলের মঞ্চে এক রমরমা পার্টি চলছিল। সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওয়েইন পারনেল ও রাহুল শর্মাসহ প্রায় ১০০ জনকে আটক করার পর হাসপাতালে নেয়া হয় রক্তের পরীক্ষা করাতে। ওই পার্টিতে থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে ১১০ গ্রাম কোকেন, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও চরস। ওই রাতের অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম অঞ্চল) বিশ্বাস নাগরে পাতিল। আগে থেকেই তাদের কাছে এ বিষয়ে খবর ছিল। তার সূত্র ধরে পুলিশ ছদ্মবেশে ওই হোটেলের বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে অবস্থান নেয়। এরপর পার্টি শুরু হওয়ার পর সেখানে অভিযান চালানো হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেছেন- ওই পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল একটি পুল (সুইমিং পুল)-এর পাশে। এতে যোগ দিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মডেল। আমরা আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জন খেলোয়াড়কেও পেয়েছি। তাদের মেডিকেল টেস্টের জন্য পাঠিয়েছি। আমরা ভারতীয় এক খেলোয়াড়কে সেখানে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাদের কাছে অনুনয় করতে থাকেন, যাতে তাকে আটক বা তার নাম প্রকাশ করা না হয়। তাহলে তাতে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। তবে বিশ্বাস নাগরে পাতিল বলেছেন, আমরা দেখছি তারা কোন উত্তেজক বা মাদক সেবন করেছেন কিনা। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আটক করার পর পুরুষদের নিয়ে যাওয়া হয় কুপার হাসপাতালে। নারীদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ভব হাসপাতালে। সেখান থেকে জে. জে. হাসপাতালে নেয়া হয়। এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পুনে ওয়ারিয়র্সের ব্যবস্থাপনার এক সদস্য বলেছেন, আমরা সোমবার দুপুর ১২টায় খেলোয়াড়দের নিয়ে বাসে করে পুনে থেকে মুম্বই এসেছি। তাদেরকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার পর আমাদের দায়িত্ব শেষ। তারপর কি হচ্ছে বা কি হবে সে দায় আমাদের নয়। ওদিকে অভিযুক্ত রাহুল শর্মা দাবি করেছেন, হোটেলের ওই পার্টি উত্তেজনায় ভরপুর ছিল তা তিনি জানতেন না। তিনি জানতেন সেটা জন্মদিনের পার্টি। তিনি বলেছেন, আমি সেখানে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন ওয়েইন পারনেল। তিনি বলেছেন, মেডিকেল টেস্টে যদি তার দেহে মাদকের উপস্থিতি ধরা পড়ে বা রিপোর্ট পজেটিভ আসে তাহলে তিনি ক্রিকেট ছেড়ে দেবেন। যারা আমাকে চেনেন, যারা আমার টিমমেট তারা জানেন আমি দল জেতার পর কখনও শ্যাম্পেন স্পর্শ করি না। ওদিকে আইপিএল নিয়ে কেলেংকারিতে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেছেন, তার রাজ্যে তিনি আইপিএল-এর কোন ম্যাচ অনুমোদন দেবেন না। কারণ আইপিএল লজ্জাজনক। এটি খেলার নামে সমাজে লজ্জা নিয়ে আসে। আইপিএলের এক বিতর্কের বিষয়ে তিনি ক্রিকেট আইকন শচীন টেন্ডুলকরের সমালোচনা করেন। তার কথায়- শচীনের মতো আইকন খেলোয়াড়ের এই টুর্নামেন্টে খেলা উচিত নয়। তিনি দিল্লির এক হোটেলে এক যৌন হয়রানির অভিযোগের সিবিআইয়ের তদন্ত দাবি করেন।