ঢাকা : বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বিশেষ করে ‘এলিট ফোস’ র্যাবের হাতে নিহত হওয়া বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ টেনে অ্যামনেস্টি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে অ্যামনেস্টির ৫০তম বিশ্ব মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকার বিচার-বহির্ভূত হত্যা বন্ধের অঙ্গীকার করলেও তা থামেনি।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর বিরুদ্ধে গত বছর বিচার ছাড়াই ৫৪ জনকে হত্যার অভিযোগ এসেছে।
এসব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত বা সুবিচার কোনোটিই হয়নি। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নতুন নারী নীতি কার্যকর করতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের ফলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়াদের ন্যয়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা কিছুটা কমেছে। তবে তা পুরোপুরি লাঘব হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভূমি ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অধিকারও সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি।
অ্যামনেস্টির হিসাবে গত এক বছরে বাংলাদেশে অন্তত ৪৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে অন্তত ৫ জনের। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা অতি সম্প্রতিক হওয়ায় এ রিপোর্টে তা আসেনি। বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়কেই দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী করেন আব্বাস।
তিনি বলেন, সরকারে যাওয়ার পর মানবাধিকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি তারা ভুলে যান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বলা হয়েছিল তারা ক্রসফায়ার বন্ধ করবে। তবে গত বছরও অর্ধ শতাধিক লোক র্যাবের হাতে নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অ্যামনেস্টির হিসাবে ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০০ বিচার-বহির্ভূত হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
র্যাবের হাতে নির্যাতন বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে আরো বেশি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, র্যাব ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে।
র্যাব যে ক্রসফায়ারের কথা বলে সেভাবে তাদের মৃত্যু হয়নি। আর এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। লন্ডনভিত্তিক এই সংস্থার বিচারে, গত বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অধিকার আদায়ে মানুষের প্রতিবাদী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা একটি বৈশ্বিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
আর এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পরিণত হয়েছে ‘বিপর্যস্ত, কক্ষচ্যুত ও ক্রমাগতভাবে অচল’ এক প্রতিষ্ঠানে।
বুধবার প্রকাশিত বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন চিত্রই তুলে ধরেছে অ্যামনেস্টি। অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী চুক্তি করারও আহ্বান জানিয়েছে এ সংস্থা।
লন্ডনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সদর দপ্তরে ৪০০ পৃষ্ঠার এই রিপোর্ট প্রকাশ করে সংস্থার মহাসচিব সলিল শেট্টি বলেন, গত এক বছরে রাষ্ট্রনায়কদের ব্যর্থতা একটি সাধারণ চিত্রে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের জবাব দিয়েছে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার সঙ্গে।
প্রতিটি রাষ্ট্রে অবশ্যই বৈধ নেতৃত্ব থাকতে হবে। ক্ষমতাহীনদের রক্ষা করতে অবিচারকে ‘না’ বলতে হবে; প্রতিরোধ করতে হবে ক্ষমতাধরদের।
এখন সেই সময় যখন প্রতিষ্ঠানের আগে মানুষকে স্থান দিতে হবে। মুনাফার আগে নিশ্চিত করতে হবে অধিকার।