বার্তা৭১ ডটকমঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সুষম খাদ্য গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুষম খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে জরুরি ও প্রয়োজন। এটা নিরাপদ খাদ্যের মধ্যেও পড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১’উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী জনগণ বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতী নারীরা পুষ্টির জন্যে কিভাবে এই সুষম খাবার গ্রহণ করবে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ সম্পর্কিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষকে একটি অনুরোধ করবো- নিরাপদ খাদ্যের জন্য কেবল ল্যাবরেটরি টেষ্ট করলেই হবে না। সেই সঙ্গে আরেকটি কাজ করতে হবে- সুষম খাদ্য কিভাবে গ্রহণ করতে হবে তা প্রচার করতে হবে।
তিনি বলেন, খাদ্যটা কিভাবে নিলে সেটা সুষম হবে, সেটা যেমন মাথায় রাখতে হবে তেমনি প্রচারেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, অতীতে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত দেশের মানুষদের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় নুন মরিচ দিয়ে পেট ভরে চারটে ভাত খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করলেও এখন কিছুটা আমিষও ক্রয় করতে পারছে।
মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আরো যাতে বাড়ে, তাদের যেন আর্থিক সচ্ছলতা আসে সেজন্যই তার সরকার নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি এ সময় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার কঠোর সমালোচনা করে এ বিষয়েও জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দেন।
খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম স্বাগত বক্তৃব্য রাখেন।
গণভবন প্রান্তে অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালসহ পিএমও এবং গণভবনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ব্যবসা করছেন তারা দু’পয়সা বেশি আয়ের জন্য খাদ্যে ভেজাল দেয় বা পচা,গন্ধ, বাসী খাবার পরিবেশন করে থাকে। এভাবে নিজের লাভের জন্য মানুষের ক্ষতি আর করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারেও একদিকে যেমন সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে অন্যদিকে কঠোর হাতে তা দমনও করতে হবে। দুদিকেই ব্যবস্থা নেয়াটা একান্তভাবে দরকার।’
তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সেই ব্যবস্থাগুলোও আপনাদের নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১শটি খাদ্যশিল্পে ‘সেফ ফুড প্ল্যান’যে নেয়া হচ্ছে এটি সারাদেশেই বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন এবং একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এটা নিয়ে যেতে হবে। আর দেশে কেন্দ্রিয়ভাবে ফুড টেস্টিং ল্যাব প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা বিভাগীয় পর্যায়েও করতে হবে।
তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০টি উপজেলায় পুষ্টি চাল বিতরণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এ কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারের ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’প্রণয়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেজাল ও দূষণমুক্ত নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরণে পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৯ রহিত করে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছি।
হোটেলগুলোতে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে তার সরকারের গ্রেডিং স্টিকার প্রদানের তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলাতেও তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী করোনার কারণে মানুষের মধ্যে পরিচ্ছন্ন থাকার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ায় এটিকে বিশেষ ইতিবাচক দিকে হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতাটা এসেছে এবং মানুষ এখন নিজেরাই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করে।’
তিনি এ প্রসঙ্গে করোনাকালিন নিয়মিত ফেস মাস্ক ব্যবহার এবং ঘন ঘন হাত পরিস্কার করার বিষয়টিও সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের রচনা এবং কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।