বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সঙ্কট তৈরি হওয়ায় পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে দিন দিন অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। গত দেড় বছর ধরে সরকার ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) পক্ষ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলেও ইতিবাচক কোন ফল আসেনি। মাঝখানে একটু স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও আবারও পুরনো গতিই চলে এসেছে পুঁজিবাজারে। টানা দরপতনের পর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর ও আয় (পিই) অনুপাত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোম্পানিগুলোর অবস্থা তুলনামূলক খুব খারাপ নয়। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ও আয়ের (পিই) অনুপাতের গড় ছিল ১৪.৫১। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে এই গড় ২৩.৫৮-এ দাঁড়ায়। ২০০৮ সাল শেষে পিই অনুপাত ১৮.৪২-তে নেমে আসে। বাজারের ঊর্ধ্বগতির ফলে ২০০৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পিই অনুপাত দাঁড়ায় ২৫.৬৫। ২০১০ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাজার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় এবং পিই অনুপাত ২৯.১৬তে উঠে যায়। সেখান থেকেই বাজারের পতন শুরু হয়। গত বছরের জুন মাসে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় পিই দাঁড়ায় ১৬.৫৫। জুলাই মাসে বাজার কিছুটা চাঙ্গা ছিল। ফলে ওই মাস শেষে বাজারের গড় পিই ১৭.৫৩ তে ওঠে। এরপর আবার ধারাবাহিক পতনের ফলে গত ডিসেম্বরে গড় পিই অনুপাত ১১-এর নিচে নেমে যায়। এরপর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হলে বাজার স্বাভাবিক হতে থাকে। কিন্তু গত এক মাস ধরে আবারও অস্বাভাবিক পতনের দিকে ধাবিত হয়েছে শেয়ারবাজার। এতে ডিএসই’র গড় পিই অনুপাত আবারও ১২.৩২-এ নেমে এসেছে। জানা গেছে, বাজেটে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হলেও এর কোন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। অথচ অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানসহ সরকারের নীতি সহায়তার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাজারে বাজেটের কোন প্রভাবই দেখা যাচ্ছে না। প্রায় এক মাস ধরে টানা দরপতনের ধারায় রয়েছে শেয়ারবাজার। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক কমেছে প্রায় ৯০০ পয়েন্ট। আর আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ ১২০০ কোটি টাকা থেকে কমতে কমতে ১৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। তালিকাভুক্ত সবগুলো কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে কমতে নতুন করে নিঃস্ব হতে চলেছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এছাড়া ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করায় উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনার কারণে গত এপ্রিল মাসে বাজার অনেকটা স্থিতিশীল হয়। কিন্তু কিছু পরিচালকের একগুঁয়েমির কারণে বাজারকে আবারও পতনের দিকে নিয়ে যায়। সেই সুযোগে শেয়ারের দরপতন ঘটতে থাকে যা এখনও অব্যাহত আছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন ঘোষণায় প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হলেও ধীরে ধীরে তা হতাশায় রূপ নিয়েছে। যাদের হাতে এখনও শেয়ার আছে তাদের অনেকেই আরও পতনের আশঙ্কায় বিপুল পরিমাণ লোকসান সত্ত্বেও সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। আবার অনেকের হাতে টাকা থাকলেও তারা এই মুহূর্তে শেয়ার কিনতে আগ্রহী নন। বাজারের পতন কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন সবাই। এমনকি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচ্যুুয়াল ফান্ডের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও নতুন করে সক্রিয় হওয়ার জন্য বাজারের ‘বটম লাইন’ খুঁজছেন। সবার একই কথা, এই মুহূর্তে শেয়ার কেনার পর বাজার আরও পড়ে গেলে নতুন করে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এরচেয়ে বাজার কতটা পড়বে তা দেখে নেয়া অনেক ভাল। এভাবে বেশির ভাগ ক্রেতা হাত গুটিয়ে বসে থাকার কারণেই বাজারে লেনদেন ও শেয়ারের দর কমছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।