ষড়যন্ত্রকারীরা যেন আর মানুষ হত্যা করতে না পারে বলে সেজন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নগর ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মায়া এসব মন্তব্য করেন।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ষড়যন্ত্র কিন্তু (এখনও) আছে। এই ষড়যন্ত্র ১৯৭১ সাল থেকে শুরু হয়েছে। একটার পর একটা অঘটন ঘটিয়েছে। ওরা কিন্তু তৎপর। সাপ কিন্তু মরে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে পুরোপুরি না মারবেন। লেজে পাড়া দিয়া ছাড়তে নাই। এই সাপকে (ষড়যন্ত্রকারীদের) চিরতরে মারতে হবে। যেন বার বার আর ষড়যন্ত্র করে মানুষ হত্যা করতে না পারে।
বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দলের সাম্প্রতিক হুমকিধামকি প্রসঙ্গে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ওরা বলে-আওয়ামী লীগ দৌঁড়ায়ে জায়গা পাইবো না। আমগো বঙ্গোপসাগরে ফালায় দিব। আমাদের পিঠের চামড়া নাকি রাখব না। কত বড় কথা? আরে ব্যাটা-এই মাসটা যাক। আগস্ট মাস শোকের মাস। এ মাসটা যাক। সেপ্টেম্বর মাসে আমরা মাঠে নামব। দেখি কেমন ব্যাটা তোমরা। হ্যাডম থাকলে মাঠে আইসো।
রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুইটা নিয়া বইয়া থাকেন। কোথায়? এই প্রেসক্লাবে আর পুরানা পল্টনে। এই দুই জায়গা হতে বাইর হইতে পারেন না। একই মাল, একই জিনিস, একই নাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কর্নেল রশিদকে ‘ইউ গো এহেড’ আদেশের মাধ্যমে খুনি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, খুনি কর্নেল রশিদ আর কর্নেল ফারুক- দু’জনই ভায়রা ভাই। তারা তাদের স্বীকারোক্তিতে, সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারে, তারা বার বার উল্লেখ করেছে, যে এই দুইজনের (জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক) সাথে আমরা বারবার শলা-পরামর্শ করেছে, দেখা করেছে, কথা বলেছে। মোশতাকের সাথে কুমিল্লার বার্ডে তারা সভা করেছে। খুনি জিয়াউর রহমানের সাথে ‘৭৫ সালের মার্চ মাসে কর্নেল রশিদ গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে খুন করার জন্য। খুনি জিয়াউর রহমানের সম্মতি চেয়েছে।
তিনি বলেন, উপ-সেনাপ্রধান (এর মতো) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যদি সেনাবাহিনীর অধঃস্তন কর্মকর্তা গিয়ে বলে যে-আমরা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। আমরা ক্যু করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। উনি (জিয়া) জবাবে কি বলরছেন? উনি কি সেই অধঃস্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন? উনি কি সেই অধঃস্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্শাল ল কোর্টে ব্যবস্থা নিয়েছেন? তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা নিয়েছেন? না, তিনি বলেছেন-‘ইউ গো আহেড’। তোমরা এগিয়ে যাও। তোমরা এগিয়ে যাওয়া মানে- হ্যাঁ, তোমরা এগিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করো। তোমরা এগিয়ে গিয়ে ক্যু করো। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করো। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন সেনাবাহিনীর অধঃস্তন কোনও কর্মকর্তাকে যখন সম্মতি দেয়-সেটা হল আদেশ। নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। খুনের নির্দেশনা দিয়েছেন খুনি জিয়াউর রহমান।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জিয়াউর রহমান পুরোপুরি অবগত ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডে মদদ দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘মার্চ মাস থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত তিনি এই পুরো তথ্য নিজে লুকিয়ে রেখেছেন এবং খুনীদেরকে সকল রকম সহযোগিতা করেছেন । সেনাবাহিনীর মহড়া করার জন্য, অস্ত্র গোলাবারুদ দেয়ার জন্য সকল রকম সহযোগিতা-সহায়তা করেছেন খুনি জিয়া।
খুনিরা ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পরে কোথায় গিয়েছিলেন প্রশ্ন রেখে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আবারো গিয়েছে খুনি মোস্তাকের কাছে। বঙ্গভবনে। তাকে নিয়ে রেডিওতে বার্তা দেয়ার জন্য। আর গিয়েছে খুনি জিয়াউর রহমানের কাছে। যারা প্রথম এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিল, প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল-কর্নেল নুরুদ্দীনসহ শাফায়াত জামিলকে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ধরে জিয়াউর রহমানের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। কেন জিয়াউর রহমানের কাছে যাবে তারা? কারণ, তারা তো জিয়াউর রহমানের সাথে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট এবং তাদের আস্থার জায়গা হলো খুনি জিয়াউর রহমান।
অনুষ্ঠান শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট কাল রাতে শাহাদাতবরণকারী সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামালসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, ঢাদসিক সচিব আকরামুজ্জামান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।