আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করি। নির্বাচনে যতটুকু স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে, সেটা কিন্তু আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। বিএনপি যখন জামায়াতকে নিয়ে সরকার গঠন করে, তার পর থেকে দেশে হত্যা, খুন, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং— এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা করেনি। ২০০১ এর নির্বাচন অথবা মাগুরা, ঢাকা-১০ এর উপনির্বাচনের কথা যদি কেউ স্মরণ করে, তাহলে বিএনপির আমলে নির্বাচনের নামে কী হতো, সেটা ওইটুকুই যথেষ্ট, যদি দেখেন। কথাই ছিল ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা। ভোটের বাকশে সিল মারা থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম হতো। তার জন্য আমরা স্বচ্ছ ভোটার বাকশো, ছবিসহ ভোটার তালিকা; কারণ ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে তালিকা করেছিল ২০০৬-এ নির্বাচন করতে বিএনপি। অবশ্য তাদের মুখে এখন খুব গণতন্ত্রের কথা শোনা যায়। তারা নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে।’
‘বাংলাদেশে ২০০৮ এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর একটানা ২০২২ পর্যন্ত এ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। না হলে এত উন্নতি হতো না। আমরা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই যথেষ্ট সাফল্য আনতে পেরেছি। আমাদের সময় সব দলই কিন্তু তাদের দল করার সুযোগ পাচ্ছে। সে ব্যবস্থাটা আমরা দিয়েছি’, বলেন তিনি।
দেশের মানুষের কল্যাণ আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হঠাৎ করে কেউ কেউ পারদর্শী হয়েছে, রিজার্ভ নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। করোনাকালে আমাদের আমদানি হয়নি, কেউ বিদেশে যেতে পারেনি, কোনো রকম খরচ ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা প্রবাসে যারা… যেহেতু কেউ বিদেশে যেতে পারেনি, হুন্ডি ব্যবসাও ছিল না, একেবারে সরকারিভাবে সব টাকা এসেছে, যার ফলে আমাদের ভালো ফান্ড আসে। যেখানে বিএনপির আমলে ‘৯১ থেকে ‘৯৬ পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যেটা ৩ মাসের খাবার আমদানি করারও পয়সা হতো না। সেই অবস্থায় আমি সরকারে আসি। তখন আমরা কিছু উদ্যোগ নেই। তখন থেকে রিজার্ভ আমরা বাড়াতে শুরু করি। সেই থেকে রিজার্ভ আমরা বাড়িয়েছি। ২০০৮ এ যখন আসি, তখনো ৫ বিলিয়নের বেশি ছিল না। সেই ৫ থেকে ৪৮ বিলিয়নে তুলতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। তা ছাড়া আমাদের যে লোন, বাংলাদেশ কোনো দিন ডিফল্টার হয়নি। আমরা সময়মতো লোন পরিশোধ করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, মানুষের কাজে লাগানোর জন্য রিজার্ভের টাকা ব্যবহার হয়েছে। এখন যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে পাঁচ মাসের খরচ মেটানো যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয় সারাবিশ্বই করছে। আমরাও করেছি। হয়তো একটু কষ্ট হয়েছে। আগামী মাস থেকে হয়তো এই কষ্ট আর থাকবে না। তারপরও আমি বলবো, তেল পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। মিতব্যয়ী হতে হবে। কারণ সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব থেকে আমরা কিন্তু মুক্ত না। এজন্য যে যার জমিটুকু কাজে লাগান। ছাদ বাগানসহ নানাভাবে উৎপাদন করেন। নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারলে ওই দুর্ভিক্ষের আঁচ বাংলাদেশে লাগবে না।
যারা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন নিয়েছেন, চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের উত্থাপিত প্রশ্ন নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, একদিনে শত রাস্তা-সেতু উদ্বোধন করেছি। এটা কি বিএনপি করতে পেরেছে? আমরা করেছি। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করেছি। করোনায় ব্যবসা বাণিজ্য যথারীতি যেন চলে, সেজন্য প্রণোদনা দিয়েছি। অভাবীদের খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। অতিমারির সময় আমদানি বন্ধ থাকায়, পরে কাঁচামাল কিনতে হয়েছে। এগুলো আমাদের রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে। আমাদের কিন্তু এখনো পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ আছে, যেটা তিনমাসের থাকলেই চলে।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, গুম-খুন হত্যার রাজনীতিতে তারা (বিএনপি) বিশ্বাস করে। তাদের আমলে আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সেসময় মানুষের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। হাওয়া ভবনের পাওনা না দিলে ব্যবসা করার সুযোগ ছিল না। এই ছিল তাদের সময়ের অবস্থা।
রাস্তাঘাট-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ খরচ নিয়ে সমালোচনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যাদের এ দেশের মাটির সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এদের মাটির চরিত্র বুঝে না। তারা খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেই। আমাদের এখানে রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণ করতে গেলে আগে মাটি শক্ত করে নিতে হয়। এখানে নরম মাটি।
‘সমালোচকরা সারাদিন কথা বলে আবার বলে বাকস্বাধীনতা নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি না করতাম, আর এতগুলো টিভি রেডিও না দিলে কীভাবে কথা বলতো? ফোন করলেও ১০ টাকা, ধরলেও। সেই ফোন সবার হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছি।’
সরকারের নানা উদ্যোগের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫০ লাখ মানুষকে বিনা পয়সায় চাল দিচ্ছি। নিম্নআয়ের মানুষকে ১৫ টাকায় দিচ্ছি। আর এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড (ফ্যামিলি কার্ড) করে দিছি। ভর্তুকি মূল্যে তারা চাল, ডাল, তেল, চিনি কিনতে পারছে। কিছু লোককে ঘর করে দিয়েছি, আরও দেবো। আমাদের টার্গেট এ দেশে একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। উপকূল ও বন্যা দুর্গত এলাকার জন্যও বিশেষ ঘর করে দিচ্ছি। বিনা পয়সায় বই দেই। বৃত্তি দিচ্ছি। কৃষকদের কৃষি উপকরণ দিচ্ছি। করোনায় শ্রমিকদের প্রণোদনা দিয়েছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা পাঠিয়েছি। এদেশের কোনো শ্রমিক বাদ যাননি। কোনো শ্রেণি পেশার মানুষও বাদ যাননি, সবাইকে নগদ অর্থ সহায়তা করেছি।
‘কই মানুষের কল্যাণে তারা এত কাজ করেনি। আমাদের আগে তো এরশাদ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল। শুধু আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এখন তো কেউ বাংলাদেশকে ছোট চোখে দেখে না। দেখতে পারে না। আমরা বিজয়ী জাতি, সারাবিশ্বে মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বলেছেন- পদ্মা সেতু করে কী লাভ হবে? এখন যে ইলিশ মাছ দুই ঘণ্টায় তাজা তাজা ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে, আর মজা করে খাচ্ছে। নানা কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ ওই অঞ্চল পুরোটাই অবহেলিত ছিল। এটা কি সুফল নয়?
বিএনপির গণতন্ত্রের আন্দোলনের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে কী হতো তার জন্য বেশি দূর যেতে হবে না। ২০০১ সালে নির্বাচন, মাগুরার নির্বাচন, মিরপুর ১০ নির্বাচনগুলো স্মরণ করলে হবে। কথা ছিল- ১০ হোন্ডা, ২০ গুন্ডার নির্বাচন। ভোটের সিলমারা থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম হতো। যার জন্য আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার লিস্ট করেছিল ২০০৬ সালে নির্বাচন করার জন্য বিএনপি। অবশ্যই তাদের মুখে গণতন্ত্রেও কথা শুনা যায়। তারা নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেক কথা বলে ফেললাম। নানা সমালোচনা শুনতে হয় তো। এত কষ্ট করে দিনরাত এত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে এই অবস্থানে নিয়ে আসছি। বাইরের লোকেরা দেখে, আমাদের দেশের লোকেরা দেখে না। তারপরও অনেক সমালোচনা শুনতে হয়, কষ্ট লাগে। যাক এখন আপনারা বলবেন, অনেক উপদেশ দিতে হবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দাহিলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।