পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থের অপেক্ষা না করে নিজস্ব অর্থায়নে যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণ কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের রূপরেখা প্রধানমন্ত্রী সংসদে প্রকাশ করার পরদিন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের পথও খোলা রাখা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নিজেদের ‘ভুল’ স্বীকার করে বিশ্ব ব্যাংককেই এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার বিশ্ব ব্যাংককে এ প্রকল্পে অর্থায়ন বা ঋণ চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ এই মুহূর্তে জানাবে না। কারণ এতে সরকারের কোনো ত্রুটি বা দোষ নেই। এদেশের মানুষ মনে করে, বিশ্ব ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও অনৈতিক ছিল।”
বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয় বলেও জানান তিনি।
দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে দাবি করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি গত ২৯ জুন বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক। এরপর এডিবিও ২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়।
দাতা সংস্থা অর্থায়ন বাতিলের পর শেখ হাসিনা রোববার সংসদে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের রূপরেখা ঘোষণা করেন।
পদ্মা সেতুর সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ২২ হাজার ৫৫৪ কোটি ২২ লাখ টাকা ধরে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত কোন বছরে কত টাকা অর্থায়ন হবে, সে পরিকল্পনাও তিনি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা নিজেরাই সেতুর কাজ শুরু করতে পারি। এর মাঝে, বিদেশিরা যদি আসতে চায়, আসতে পারে।”
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিব বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে শিগগিরই পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করবে। নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি বিকল্প অর্থায়নের উৎসও খোঁজা হবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, তা বিবেচনায় রাখা হবে।
“মন্ত্রিসভা মনে করে, বিশ্ব ব্যাংকের কারণে এ সেতু নির্মাণে আমাদের অনেক বিলম্ব হয়েছে। এক্ষেত্রে আর কোনো বিলম্ব গ্রহণযোগ্য নয়,” বলেন মোশাররাফ।
নিজস্ব অর্থায়নের উৎসের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে এর বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার পর্যালোচনা করে এগুলো বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে যেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই অথবা যেসব প্রকল্পের অর্থ পরে ছাড় করলেও সমস্যা নেই, সেগুলো থেকে অর্থ নিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা হবে।
পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে চলতি অর্থবছরে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের বর্তমানে যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে, তাতে এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় হলেও কোনো সমস্যা হবে না। এরপরও দেশে রেমিটেন্স আসা অব্যাহত রয়েছে। অনেক প্রবাসীও এ প্রকল্পে অর্থের যোগান দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে ভাষণে দেরির জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার কথা বলেছিলেন।
এই বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে সচিব বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের সিদ্ধান্তের কারণে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয় দেশের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি হয়েছে। এসব উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“বিশ্ব ব্যাংক যে অন্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিরসনেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।