ঢাকা, ১৩ জুলাই: উপাচার্য (ভিসি) ও উপ-উপাচার্যের (প্রোভিসি) পদত্যাগের দাবিতে শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই ধর্মঘট বন্ধ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।শুক্রবার দিন শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা বৈঠকের পর তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়েছে।
এদিকে ভিসি ও প্রো ভিসির পদত্যাগের দাবির পক্ষে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষকদের পক্ষের ছাত্ররা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুজিবর রহমান জানান, এ আন্দোলনের বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাচ্ছে না। অভিযুক্তরা প্রধানমন্ত্রীকে মনগড়া তথ্য দিচ্ছেন। আর এ জন্যই সমাধান পেতেও দেরি হচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন বুয়েট উপাচার্য ড. এসএম নজরুল ইসলাম। পরে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কোনো অনৈতিক দাবিতে পদত্যাগ করবেন না বলেও জানান উপাচার্য।
বুধবার সকাল থেকে উপাচার্যের অফিসের সামনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীরা অবস্থান নেন। আর দুপুরে বুয়েট শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে একটি মৌন মিছিল বের করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন মুজিবুর রহমান।
এরপর বিকেলে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বুয়েটের সব কয়টি অনুষদ, বিভাগ এবং ইনস্টিটিউটের প্রধানরা পদত্যাগ করেন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন নির্বাচিত ডিন, তিন জন ইনস্টিটিউট পরিচালক এবং ১৫ জন বিভাগীয় প্রধান রয়েছেন।
উল্লেখ্য, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ ১৬ দফা দাবিতে গত ৭ এপ্রিল থেকে আন্দোলন করছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। প্রায় এক মাস কর্মবিরতি পালনের পর গত ৪ মে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যান। এরপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি রিপোর্ট দেয়ার পর শিক্ষকরা তা গ্রহণ না করে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
এর অংশ হিসেবেই এ অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন বুয়েট শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
একটি সুত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের মতো শুক্রবার রাতেও ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বাড়তে পারে। বৃহস্পতিবার রাত ২ টার দিকে ছাত্রলীগের প্রায় ৪০ জনের একটা দল ক্যাম্পাসে ঢোকার চেস্টা করে। তবে শিক্ষকরা তাদের ঢুকতে দেননি। মেইন গেটে রাত বারটার পরই তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে জানায় তারা বুয়েটেরই স্টুডেন্ট, তারা স্যারদের সাথে কথা বলতে চায়। স্যাররা তাদেরকে সকালে আসতে বলেন। এরপর দুইজন স্যার গিয়ে তাদের সাথে বাইরেই কথা বলেন। সন্দেহ করা হচ্ছে তারা বর্তমান ভিসির সমর্থক।
বিভিন্ন সুত্র আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আজ রাতে এই দলটি মিছিল বা এরকম কিছু করতে পারে। এজন্য সকল শিক্ষার্থীকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষক ও ছাত্ররা।