আগামী একুশে বইমেলা হুমায়ূন আহমেদের নামে উৎসর্গ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এছাড়া, বাংলা একাডেমীতে স্থাপিত জাতীয় লেখক ও সাহিত্য জাদুঘরের একটি অংশে হুমায়ূন আহমেদের পাণ্ডুলিপি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বাংলা একাডেমীর রবীন্দ্র চত্বরে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে আয়োজিত এক শোকসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলা একাডেমী এ শোকসভার আয়োজন করে। একই সঙ্গে শোকসভায় একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে হুমায়ন আহমেদের জন্মদিনে হুমায়ূন মেলার প্রবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের প্রতিথযশা কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্মৃতিচারণ করেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সংস্কৃতি সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি, কবি সৈয়দ শামসুল হক, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী, প্রকাশক আলমগীর রহমান, আনিসুল হক, আসলাম সানী, গোলাম কুদ্দুছ, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মোহিত কামাল। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় হুমায়ূন আহমেদ পরিবারের কয়েকজন সদস্য এবং দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বহুমাত্রিক অবদান রেখেছেন। তার সৃষ্টি দেশকালের সীমা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক মাত্রা অর্জন করেছে। এমন স্বাপ্নিক লেখকের মৃত্যু নেই। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাঠকের ভালবাসার মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন। শামসুজ্জামান খান বলেন, আমরা বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে শিগগিরই ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকার হুমায়ূন আহমেদ সংখ্যা প্রকাশ করবো। এছাড়া, আগামী তিন মাসে হুমায়ূন আহমেদের নির্বাচিত দশটি উপন্যাস নিয়ে ধারাবাহিক লিখিত আলোচনার ব্যবস্থা করা হবে। পরে এই আলোচনাগুলোর সঙ্কলন হিসেবে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হবে। সুরাইয়া বেগম এনডিসি বলেন, সবশ্রেণীর মানুষের ভালবাসা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ পরিণত হয়েছেন সমকালীন বাংলাদেশের এক বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বে। এই গুণী লেখকের স্মৃতি-সংরক্ষণে সরকারের কোন সহায়তার প্রয়োজন হলে আমরা তা সবসময় করতে প্রস্তুত রয়েছি। আনিসুল হক বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু আমাদের প্রকাশনা শিল্পে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। যে বিস্ময়কর জাদুতে তিনি গত চার দশক পাঠকদের মোহাবিষ্ট করে রেখেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। সেলিনা হোসেন বলেন, হুমায়ূন আহমেদের রচনায় মুক্তিযুদ্ধ নতুন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে। অনাগত বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্টি বিবেচিত হবে অক্ষয় সম্পদ হিসেবে। শুধু সংখ্যাগত প্রাচুর্য নয়, শিল্পের নবমাত্রা নির্মিতিতেও তার অবদান অসামান্য। আলমগীর রহমান বলেন, হুমায়ূন আহমেদের নামে একটি জাতীয় সড়কের নাম রাখা হোক। একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে তার জন্মদিনে হুমায়ূন মেলার প্রবর্তন করা হোক। সালেহ চৌধুরী বলেন, বাংলা একাডেমী হুমায়ূন আহমেদের স্মরণে এই শোকসভা আয়োজন করে হুমায়ূনভক্তদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের বিপুল রচনাবলির একটি বিশেষ সংস্করণ বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশের প্রস্তাব জানাই। সৈয়দ শামসুল হক বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিছক জনপ্রিয়তার দৃশ্যগ্রাহ্য মানদণ্ডে বিচার করলে ভুল হবে। তার সৃষ্টিকুশলতা উত্তর প্রজন্মের লেখকদের জন্য পাথেয় হিসেবে কাজ করবে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ঐতিহ্য, আধুনিকতা, বিজ্ঞান ও মরমিবাদের মতো আপাত-বৈপরীত্যকে সুনিপুণ দক্ষতায় একত্রিত করেছেন। ভাষার বৈচিত্র্যেও ভাস্বর তার সৃষ্টিভুবন।