ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত হলো নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ)। সুস্থ রাজনীতি উপহার দেয়ার অঙ্গিকারে ২১ দফা ঘোষণার মধ্যদিয়ে রাজধানীর ইম্পিরিয়াল হোটেলে এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি নতুন দলের ঘোষণা দিয়েছেন। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়, এ দলের ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি, ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও ৫১ সদস্য বিশিষ্ট ৩০০টি আসনভিত্তিক একটি কমিটি নির্বাচিত হবে। মাঠ পর্যায়ে দলের কমিটি হবে ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক। তবে নতুন দলের ঘোষণাকালে পরিচিত কোন মুখ দেয়া যায়নি। মঞ্চে বড় সারিতে বেশ কয়েকটি চেয়ার রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত দুটো চেয়ার ছাড়া সবগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। পুরো সময় মঞ্চে ছিলেন কেবল আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। ব্যানারের এক পাশে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি টানানো হয়। নাজমুল হুদার নির্বাচনী এলাকা দোহার থেকে কয়েকশ’ সমর্থক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। আগামী সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা তুলে ধরে নাজমুল হুদা বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ অবান্তর। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় নির্বাচনে ভোটার তালিকা প্রণয়ন, হালনাগাদ, সঠিকভাবে ভোট গণনাসহ সর্বদলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হলে অন্য কোন সরকারের প্রয়োজন হবে না। তবে সরকারের সব নির্বাহী ক্ষমতা দিতে হবে কমিশনকে। ২১ দফা ঘোষণাপত্রে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে। কোনভাবেই যেন নিরীহ ব্যক্তিকে যুদ্ধাপরাধে জড়ানো না হয়। বর্তমান হানাহানির রাজনীতির জন্য তিনি প্রধান দুই দলকে দায়ী করেন। একইসঙ্গে ছাত্ররাজনীতিকে শিক্ষাঙ্গনের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা বলেন এবং শিক্ষাঙ্গন থেকে শিক্ষক রাজনীতিকে উৎপাটন করার ঘোষণা দেন। ঘোষণাপত্রে নাজমুল হুদা বলেন, আমরা মুসলমান, বাঙালি ও বাংলাদেশী। আমরা অতি মুসলমান হয়ে অবাঙালি হতে চাই না। আবার অতি বাঙালি হয়ে অমুসলমানও হতে চাই না। একদিকে যেমন দাদা দাদা করে ভাইকে ভুলতে চাই না অন্যদিকে মারহাবা মারহাবা বলে ধন্যবাদকে বিসর্জন দিতে চাই না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুল, মানবাধিকার সম্মত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, দলীয়করণের অভিশাপ মুক্ত দেশ, হরতাল-বিক্ষোভ-নৈরাজ্য-গুম-হত্যা বন্ধে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার হুদা বলেন, আমি জিয়ার আদর্শে বিশ্বাস করি। বিএনপিই আমার ঠিকানা। তবে বিএনপিতে স্বাধীন মত প্রকাশ করতে না পারায় নতুন দল গঠন করেছি। এ দল তৃতীয় কোন শক্তি নয় বরং নতুন রাজনৈতিক বিকল্প শক্তি। নতুন দল গঠনে বিশেষ কোন শ্রেণীর হাত আছে কিনা জানতে চাইলে হেসে উড়িয়ে দেন নাজমুল হুদা। বলেন, বাংলাদেশে গুঞ্জন আছে কেউ আইএসআইএর দালাল, আবার কেউ ‘র’-এর দালাল। আমি যদি বাংলাদেশের জনগণের দালাল হই তাতে সমস্যা কি? আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে দলে থেকে আমি স্বাধীনভাবে মতামত ব্যক্ত করতে পারি না সে দলে থাকার যৌক্তিকতা কি? আমি বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাতে। তিনি সে আহ্বান জানালে রাজনৈতিকভাবে বড় হতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাই আমি দল থেকে বেরিয়ে এসেছি। দলের ভেতরে থেকে ষড়যন্ত্র করিনি। এখন আমি কি করবো সেটা আমার বিবেচনা। আমার এ উদ্যোগের কারণে যদি বিএনপি ভাঙে তাহলে আমার কি দোষ? বরং যারা ধরে রাখতে পারবে না তাদের দোষ দেয়া যায়। আমি কেবল যারা বিএনপি থেকে সরে গেছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেন, জিয়া ও তার আদর্শ জনগণের সম্পদ। তাই যেই কেউ এটা ব্যবহার করতে পারে, এ নিয়ে আইনি কোন জটিলতা নেই। তিনি বলেন, আমি উদ্যোক্তা মাত্র। এখানে কাউন্সিলের যারা নির্বাচিত হবেন তারাই পরবর্তীকালে নেতৃত্ব দেবেন। এ দলের প্রতিটি পর্যায়ে গণতন্ত্রের পূর্ণ চর্চা হবে। ব্যারিস্টার হুদা বলেন, আমার জন্য একটি যোগসূত্র হচ্ছে মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা। সারাদেশে তারা এর সঙ্গে যুক্ত হবেন এবং বিশিষ্ট নাগরিক যারা আগ্রহী হবেন তাদেরও আমি যুক্ত করব। নানা ঘটনায় আলোচিত নাজমুল হুদা ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার কারণে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২০১০ সালের ২৩শে জুন তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। ভুল স্বীকার করে খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করার পর ২০১১ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর আবার দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরে পান তিনি। পরে গত ৬ই জুন সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অভিমানের কথা তুলে ধরে বিএনপি ত্যাগের ঘোষণা দেন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন।