ঢাকা, ২৩ আগস্ট: মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তার জামিন বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-১এর চেয়ারম্যান বিচারক নিজামুল হকের নেতৃত্বে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ অফিসার জানিয়েছেন।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এটিএম আজহারুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বেলা দুইটায় আদালত বসবে এবং মামলার শুনানি করবেন। আমরা তার পক্ষ থেকে জামিন আবেদনের শুনানি করবো বলে আশা করছি।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার নাসিরউদ্দিন বলেনম “এটিএম আজহারুল ইসলামকে নিয়ে আসার পরে বলা যাবে কখন শুনানি হয়। এর আগে আমরা বলতে পারছি না।”
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে দিকে তাকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় এনে হাজির করা হয়।
এর আগে বুধবার এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তাকে তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১এ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতারের আবেদন জানানো হয়। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধে নেতৃত্ব দান এবং সহায়তার অভিযোগ আনা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরের গ্রেফতারের আবেদনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা না হলে তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। তাকে গ্রেফতার করা না হলে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে ভূমিকা পালন করবেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন গ্রহণ করে বুধবার সকাল ১১টার দিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর দুপুর দুইটার পর রমনা থানা পুলিশ এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অফিসে নিয়ে যায়। সকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরপরই এটিএম আজহারুল ইসলামের বাসার সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।
গ্রেফতারের পূর্বে এটিএম আজহারুল ইসলাম বাসার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাকে মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্য মামলায় ১০ মাস ২৭ দিন বন্দি থাকার পর গত ১৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার তিনি জামিনে মুক্তি পান।
বুধবার সকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নূরজাহান বেগম মুক্তা ট্রাইব্যুনালে এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতারের আবেদন করেন। বন্দি জামায়াত নেতাদের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ফরিদ উদ্দিন খান বলেনম সকালে কোর্ট শেষ হবার সামান্য পূর্বে তিনি খবর পেয়ে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেন। তিনি ছাড়া তখন অভিযুক্ত পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আদেশ অনুযায়ী গ্রেফতারের সময় এটিএম আজহার এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সরকারের পতন আন্দোলনের মাধ্যমেই ঘটবে।”
তিনি বলেন, “জনসমর্থনই প্রমাণ করবে যে, সরকারের এসব সাজানো নাটক।”
দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে পুলিশের একটি প্রিজনভ্যানে করে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে প্রিজনভ্যানটি ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করে। ডিএমপি’র রমনা জোনের ডিসি নুরুল ইসলাম এ সময় সাংবাদিকদের জানান, আদালতের রাযের কপি হাতে পৌঁছার পরেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
তিনি বলেন, “আদালতের রায় অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এটিএম আজহারকে আদালতে হাজির করা হবে। জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন জামায়াতের এই নেতা।”