বার্তা৭১ডটকমঃ বিশ্বজিত হত্যার অভিযোগে এখন পর্যন্ত আটজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর।
মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ছাত্র লীগ কর্মীদের হামলায় নিহত বিশ্বজিত দাস গুরুতর আহত হলে একজন রিক্সা চালক তাকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত বিশ্বজিতের ভাই জানান বিশ্বজিত কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলো না শাখারিবাজারে তার টেইলার্স ছিল। রোববার প্রতি দিনের মতোই সে দোকানে যাচ্ছিল।
হাঠৎ অবরোধকারী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় সে ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে একটি ওষধের দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানেও অবরোধ বিরোধীরা তার ওপর হামলা করে। এসময় বিশ্বজিত নিজেকে বাঁচাবার জন্য “ভাই আমি হিন্দু” বলে আকুতি জানায় কিন্তু কেউ তার কথা শুনেনি।
এদিকে বিশ্বজিতকে হত্যার পর সূত্রাপুর থানায় নিহতের পরিবার থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। বলে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম যমুনা নিউজকে জানান, এব্যাপারে নিহতের পরিবাবের দেরি দেখে পুলিশ বাদি হয়ে একটি হত্যামালা দায়ের করেছে।
পরিবারকে এড়িয়ে পুলিশের মামলার বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে সূত্রাপুর থানার (ওসি) নজরুল জানান, “স্বজনরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেছেন। তাই বিলম্ব হয়ে যাবে বলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করেছে।”
বিশ্বজিতের ওপর হামলাকারী হিসেবে ছাত্রলীগের কয়েকজনের ছবি প্রকাশ পেলেও মামলায় আসামির তালিকায় কারো নাম উল্লেখ করেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে ওসি নজরুল বলেন, “এতে আসামি ধরতে সুবিধা হবে। যে কাউকে সন্দেহের তালিকায় আনা যাবে।”
পত্রিকায় ও টেলিভিশনে যাদেরকে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে, তাদেরকে পুলিশ চিহ্নিত করেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিশ্বজিতকে যারা কুপিয়েছে বলে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, সোমবারও তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাসে ছিল।
এর মধ্যে শাকিল, সাইফুল, ইমদাদুল ও নাহিদ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীরন ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম শরিফুল ইসলাম বলেন, “বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। যাদেরকে দেখা গেছে, তারা ছাত্রলীগের কেউ নন।”
তারা ছাত্রলীগে যুক্ত না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই বলে ছাত্রলীগ নেতা শরিফ বললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ওদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে হরহামেশাই দেখা যায়।
বিশ্বজিত নিজে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
শরীয়তপুরের নড়িয়ার মসুড়া গ্রামের চিতায় রোববার রাতে বিশ্বজিতের মরদেহ দাহ করা হয়। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে বিশ্বজিত ছিল সবার ছোট।
শাঁখারী বাজারে নিজের দোকানে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন বিশ্বজিত। হামলাস্থল থেকে তার দোকান ছিল মাত্র ৫০ গজ দূরে।
বিশ্বজিতের মৃত্যুর পর বিএনপি নেতারা তার মরদেহ দেখতে হাসপাতালে যান। তারা এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দাও জানান।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, বিশ্বজিত হত্যাকারীদের তদেন্তর মাধ্যমে চিহ্নিত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।