বার্তা৭১ডটকমঃ: আঁখি, অ্যাড এজেন্সির কপিরাইটার। বিবাহিত। ওর রোজনামচায় সাজ, মোবাইল, সিগারেট আর বন্ধু। পুরুষ নিয়ে নানান ফ্যান্টাসির জাল ছড়ায় ওর একার মন।সে অর্থে আমার কোনও পুরুষবন্ধু বা স্বামী হতে পারে না- সকালের প্রথম কফিতে চুমুক দিয়ে বলল আঁখি। আশিস সঙ্গে পড়তে এসে হঠাৎ আলাপ হয়েই দু’মাসের মধ্যে বিয়ে করার কথা ভেবেছিল তারা। কিন্তু বিবাহিত জীবনের বাঁধাধরা কোনও ছবিই ওদের পাঁচ বাই
বারোর ফ্ল্যাটে ধরা পড়েনি। জানতে চাইলাম বিয়েই কেন? শহরের বিখ্যাত কনভেন্ট স্কুলে পড়া আঁখি জানাল স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে স্টার ওয়ার্ল্ড-এর বিদেশি সিরিয়াল তাকে ভীষণ টেনেছিল। সেখানকার গতানুগতিক সম্পর্কের বাইরেও নানান বন্ধুতা, অদ্ভুত সব সম্পর্কের দৃশ্য দেখতে দেখতে সে নিজের চারপাশের সম্পর্ককেও নতুন করে জানতে শিখল। “আমার চারপাশে কোনও সমবয়সি পুরুষ ছিল না, এমনকী কোনও ভাই-ও না। আর তাই ‘ডিফেরেন্ট স্ট্রোকস্’, ‘ওযান্ডার ইয়ার্স’, ‘ফ্রেন্ডস্’- এই সিরিয়ালগুলো থেকেই তখন আমি আমার বন্ধু, পুরুষ, খুঁজে পেতাম।” মনোবিদরা বলেন অল্পবয়সের সাজানো মন ছবিই প্রাপ্তবয়সে নিজের জীবন ছবিতে দেখতে চায় মানুষ। আঁখিও নিশ্চয় তার ব্যতিক্রম নয়।
আসলে বন্ধুত্বের মধ্যে মেয়ে-পুরুষ আমার কাছে আলাদা কিছু নয়। আজ আমার যে চার জন পুরুষবন্ধু আছে তাদের সঙ্গে যে কোনও পোশাকেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি ঠিক তেমনই যেমন আমি আমার মেয়েবন্ধুর সঙ্গে থাকলে করতাম। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি মেয়ে, আমার ‘শরীর’ নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবিনি। আমার বোন আর আমি যখন একসঙ্গে বাড়ি ফিরতাম তখন বাড়িতে এসেই স্কুলের পোশাক ছেড়ে আমি ভাবতাম কী পরা যায়? পোশাক ঠিক করে তারপর চেঞ্জ করার কথা তখনও ভাবিনি, আজও ভাবি না। এতে আমার বোন খুব অবাক হত। বাড়িতে পুরুষবন্ধু থাকলে আমি লো নেক টি শার্ট পরব না এমনটা ভাবি না। রাতে অন্তর্বাস ছাড়া টি-শার্ট পরে আড্ডা দিতেই আমি অভ্যস্ত। এই স্পেসগুলোই আমি আমার পুরুষবন্ধুদের থেকে চাই। সে একা হলে, দুঃখ পেলে আমি তাকে হাগ করি, আদর করি। আসলে আমি আমার শরীর দিয়ে মন বোঝাই, টাচিং, হাগিং- এগুলো আমার কাছে খুব ইম্পর্টেন্ট, অথচ সেই চার জন পুরুষকে নিয়ে আমার কোনও সেক্সুয়াল ডিসায়ার কখনওই তৈরি হয়নি। জানতে চাই তোমার এই চার পুরুষের কেউ যদি কোনও দিন তোমায় আলাদা করে শরীর পেতে চায়? কী করবে তখন? আঁখি ঠোঁট টিপে জানায় “আই ক্যান হ্যান্ডেল এনি অফ দেম। একতরফা শরীর খেলা হয় না।”
তা হলে আঁখির শরীর খেলার সঙ্গী কে বা কারা? প্রশ্ন রাখি-
আঁখি বলে “আমার প্রেমিক আমার স্বামী নয়। কেবলমাত্র উপলের সঙ্গেই আমার শরীর ছোঁয়া। আমার পুরুষবন্ধুদের সঙ্গেও কোনওভাবে শরীরী নেশায় আমি মেতে উঠতে পারব না। নয়। আমি রোম্যানটিসাইজ করি এক অন্য পুরুষের। পাইনি তাকে। আর আমার কাছে ফোর প্লে সবচেয়ে সবচেয়ে ইমপর্টেন্ট, আঁখির কাজল চোখে দুষ্টু হাসি। ফস করে বলে বসে “আমি এই বত্রিশেও সতেরো বছরের ছেলে আছে এমন পুরুষের সঙ্গে ফ্লার্ট করতে পারি, আর তার ছেলেকেও মানুষ করতে পারি। অ্যান্ড আই এনজয় দ্যাট।”
পুরুষবন্ধু আছে অথচ সেখানে সেক্স নেই। শরীরের খিদে আছে, অথচ তার সবটাই স্বামীর সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। বাচ্চা নেই, অথচ ছেলে মানুষের প্রবল ইচ্ছে আছে। তবে? “আসলে আমি আমার জীবনকে কোনওদিনই গোছাইনি। বহু সম্পর্কে বিশ্বাসী আমি। বাবা মায়ের সঙ্গে থেকে এই ভাবনায় জীবন কাটাতে পারতাম না। এই শহরেও বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে ‘লিভ ইন’ করে উপলের সঙ্গে কাটাতে পারতাম না। তাই বিয়ে করলাম। এই সম্পর্কে রোম্যান্স থাকতে পারে না। যার সামনে রোজ ব্রাশ করি, জ্বর হলে বমি করি তার সঙ্গে আর যা-ই হোক রোম্যান্স হয় না।” কিন্তু তাও আঁখি উপলের সঙ্গে থাকে। কারণ তার অকপট স্বীকারোক্তি ‘আই নিড মেন অল দা টাইম’। আমার এই ভাবনা নিয়ে একজন পুরুষের সঙ্গেই আমি থাকতে চেয়েছিলাম। উপল সেরকমই একজন। প্রয়োজনে আমরা একে অপরকে সঙ্গ দিই, ভালবাসি।
আর রোম্যান্স? জানতে চাইলে আঁখি বলে ‘আপাতত টেক্সট মেসেজেই’ আঁখির মুখে নরম হাসির ঝলক। “তাকে যে কোনও সময় যা মনে হয় ঠিক তাই-ই বলি। সে কী ভাবল বা বুঝল তা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। ভীষণ সেক্সি লোকটা।” আঁখি কিছুক্ষণের জন্যে থেমে যায়। জানতে চাই “দেখবে না? তাকে?” “জানি না, দেখা পেলে দেখব, নয়তো যেমন চলছে। অ্যাম ওয়েটিং ফর আ ম্যান… ফর রোম্যান্স। আসলে থার্টি ইস দ্যা প্রাইম টাইম ফর সেক্স, আর আমার ক্ষেত্রে ইটস্ জাস্ট অ্যাবাউট অ্যাভারেজ!” সেই কারণেই আঁখির মন পুরুষদের ফ্যান্টাসাইজ করে চলে। আঁখির স্পষ্ট জবাব, “আর প্রেম চাই না আমি। জাস্ট ওয়ান্ট টু বি আ লিটল নটি ইফ আই গেট আ চান্স।” এই কথায় মনে হয় সে যেন শুধুই প্রতীক্ষায়, অক্ষত রেখেছে ওই রোমাঞ্চিত যমুনা। বলে “উপলেরও একজনকে দরকার বলে আমার মনে হয়, যার সঙ্গে ও চুটিয়ে প্রেম করবে। হি অলসো নিড দ্যাট ব্যাডলি।” সিগারেটের ধোঁয়ায় ঝলকে ওঠে তার লিপস্টিক রাঙা ঠোঁট।
আঁখিকে আলাদা করে বুঝতে চাইলাম না, কিছু চেনা সামাজিক ছকের ছবি দিয়ে যাচাই করতেও ইচ্ছে হল না। দিব্যি ফুরফরে এক নতুন মানুষকে দেখলাম ওর মাঝে। মনে হল ও-ই পারবে কোনও এক বধির কবিকে মুগ্ধ করে, সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত করে, উন্মাদ কবির সঙ্গে ঝরনায় প্রকাশ্য স্নান করতে। আসলে ও অন্যের মাঝে নিজেকেই খুঁজে চলেছে।