বার্তা৭১ ডটকমঃ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সকাল সন্ধ্যা হরতাল সর্বাত্মকভাবে পালিত হচ্ছে। ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ হরতালে গোটা দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। রাজধানীতে একাধিক যানবাহনে আগুন এবং বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তারা রাস্তায় চলাচলকারিদের তল্লাশী চালাচ্ছে।
শাহবাগ মোড়ে ইউনাইটেড নামে একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় পিকেটাররা। এছাড়া পান্থপথে পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থনকারীরদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওযার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ওই স্থানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
যাত্রাবাড়িতে শিবির-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে শিবির কর্মীরা। হরতালের সমর্থনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি মাছের বাজার এলাকায় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জবাবে শিবির কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কমপক্ষে ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
ডেমরা রোডে পরপর দু’টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় পিকেটাররা। স্থানীয় ৮৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগের অফিসের সামনে সকাল সাড়ে সাতটায় ককটেল দু’টির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ উপস্থিত না থাকলেও ককটেল বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ চলে আসে।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশের সঙ্গে পান্থপথে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয় হরতাল সমর্থকদের। এখানে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিল থেকে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। পরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এছাড়া তেজগাঁও কলেজের সামনে হরতাল সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সহিংসতা দমনে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে।
এছাড়া মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকে প্রশিকা ভবনের সামনে একটি মিনিবাস পুড়িয়ে দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। বাসটি পুড়ে সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেছে।
এছাড়া নয়াপল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, যাত্রাবাড়ী, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, সায়দাবাদ, খিলগাঁও, মালিবাগ, মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহনশূন্য রাজপথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে।
এর আগে হরতালের আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। হরতাল সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জোটের দলগুলো এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। বছরের প্রথম এবং জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা এ হরতালে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছ বলে মনে করছেন বিরোধী নেতারা।
এদিকে হরতালের আগের দিন শনিবার দুপুরের পর, সন্ধ্যায় এবং রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫টি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মগবাজার, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াতের অঙ্গসংগঠন শিবিরের নেতা-কর্মীরা।
হরতালকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কাসহ সার্বিক বিষয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে শনিবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০ জনকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গত বৃহস্পতিবার সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার। বৃহস্পতিবার রাতে তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করে রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করার সিদ্ধান্ত নেন। শুক্রবার ১৮ দলের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক করে হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। পাশাপাশি রোবাবার সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের পূর্ব-নির্ধারিত সব কর্মসূচি বাতিল করে দেন তিনি।
দেশব্যাপী হরতাল সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন স্পটে পিকেটিং করার জন্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। হরতালের সমর্থনে শনিবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ করা হয়। শনিবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগর কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি থেকে শুরু করে শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও মালিবাগ এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন নেতারা।
শনিবার বিকেলে হরতালের প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হরতাল সামনে রেখে সারা দেশে পুলিশ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও ধরপাকড় করছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাতে দেশের মানুষের স্বার্থে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাই। এর পরও সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরের মতো আমাদের নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশির নামে ভাঙচুর ও গ্রেপ্তার শুরু করেছে।’ শনিবার বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দুই শতাধিক এবং আহত ২১২ জনের অধিক দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনী ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের মতো আচরণ করছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও র্যাবের যেসব সদস্য এসব করছেন, তাঁদের আমরা চিনে রাখছি। তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’
হরতালে বিভিন্ন দল ও নেতার সমর্থন : হরতালে সমর্থন জানিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এবং সম্মিলিত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের ৩১ নেতা।এছাড়া এ প্রথমবারের মত বিরোধী জোটের হরতাল কর্মসূচী যৌক্তিক আখ্যায়িত করে প্রকারান্তরে সমর্থন জানিয়েছন ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।