বার্তা৭১ ডটকমঃ সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের দীর্ঘ আট মাস পর চিঠি দিয়েবিষয়টি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
ফলে থিতিয়ে আসা সেই প্রশ্নটি আবারও নতুন করে সামনে চলে এসেছে- দল থেকে বহিষ্কৃত লতিফকে সংসদ সদস্য পদওহারাতে হবে?
হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গতবছর অক্টোবরে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর পাশাপাশি দল থেকেও বহিষ্কার করে।
সে সময় তার সাংসদ পদ নিয়ে নানামুখি আলোচনার মধ্যে সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছিলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ‘ফ্লোর ক্রসিংয়ে’ না পড়ায় লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বাদ পড়লেও সাংসদ পদে থাকতে পারবেন।
তবে এ নিয়ে ‘কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে’ স্পিকার ‘আইন বিশ্লেষণ করে’ তার সমাধান দেবেন বলেও সে সময় জানিয়েছেন তিনি।
এর মধ্যে ধর্মীয় উসকানির মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের বড় ভাই লতিফ। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর গত ২৯ জুন তিনি মুক্তি পান।
শেষ পর্যন্ত লতিফকে বহিষ্কার করার বিষয়টি জানিয়ে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি গত ৫ জুলাই স্পিকার শিরীন শারমিনের হাতে পৌঁছায়।
স্পিকার বলেন, “গত ৫ জুলাই আওয়ামী লীগ অফিস থেকে আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা আইন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তার সংসদ সদস্য থাকবে কি না- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পিকার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার।
একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে।
এ দুটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিরীন শারমিন বলেন, “প্রত্যেক্যের সারকামটেন্সেস (পারিশ্বাপার্শিকতা) ভিন্ন ছিল।”
অবশ্য লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হওয়ার পর নানামুখি আলোচনার মধ্যে গত ২ অক্টোবর স্পিকার বলেছিলেন, “সংবিধানে বলা আছে কী কী কারণে এমপি পদ থাকবে না। দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি সংবিধানে নেই।”
সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে সংবিধানের ৭০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
ওই অনুচ্ছেদে দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সদস্য পদের কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই; যা লতিফ সিদ্দিকীর বেলায় প্রযোজ্য।
গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন তখনকার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী লতিফ।
এরপর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন মামলা হয়।
বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলগুলোর আন্দোলনের হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মুখে সবই খোয়াতে হয় লতিফকে।
২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। পরদিন তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।