বার্তা৭১ ডটকমঃ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনটি আজ বুধবার বেলা ১১টার পর খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয়। প্রথমে শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সাকার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।
এটি সাকা এবং মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত আদেশ।
এখন তাদের সামনে আর একটি সুযোগ আছে, তা হলো রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। এরপর দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি আসবে।
গতকাল মঙ্গলবার এই বেঞ্চে মুজাহিদের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ হয়। এই বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আদালতে মুজাহিদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাঁকে শুনানিতে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ আদেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের সূত্র বলেছে, রায়ের বিরোধিতাকারী চক্রটি নাশকতা চালাতে পারে বলে তথ্য রয়েছে। এ জন্য রাজধানীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল থেকে রাজধানীতে অতিরিক্ত সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও মাঠে আছেন।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে মুজাহিদ আপিল করেন। গত ১৬ জুন বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মুজাহিদ।
অন্যদিকে সাকার মামলাতেও পুনর্বিবেচনার আদেশ বিচারিক প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ। এখানেও ফাঁসির রায় বহাল থাকায় সাকা চৌধুরীর সামনে সবশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ আছে। এরপর দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি আসবে।
সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর আজ সকালে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত আজ বেলা সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে আদেশের সময় নির্ধারণ করেন।
গতকাল মঙ্গলবার ওই আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সাকা চৌধুরীর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি এক দিন পিছিয়ে দেন আদালত।
গতকাল একই বেঞ্চে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ হয়। পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের কার্যতালিকায় রাখেন।
সাকা চৌধুরীর ফাঁসির সাজা বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। এর ১৪ দিনের মাথায় ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন সাকা চৌধুরী।
২০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন চেম্বার আদালত ওই আবেদন শুনানির জন্য ২ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেছিলেন। পরে সাকা চৌধুরীর আইনজীবীর সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির তারিখ ১৭ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ।
১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।