বার্তা৭১ ডটকমঃ
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডের জন্য স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্রকে অভিযুক্ত করে হত্যাকারীদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার সংসদে সরকারি দলের সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে শোনা যায় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা কোথায় কে একটু শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাদেরকে শেষ করে দেয়া হচ্ছে। তাদেরকেই হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যা পরিকল্পনাই বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড। এ ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। আমরা যেমন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি, তখন লিটনের হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের ঠিকই খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। গাইবান্ধা থেকে সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। এটাই ছিল তার অপরাধ। এ জন্যই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। লিটনের মৃত্যুতে আমরা একটি সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে হারিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী ও সুন্দরগঞ্জ থেকে মিঠাপুকুর পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র প্রচণ্ড সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। সে সময় ওই এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে ও আগুন দিয়ে ৪ জন পুলিশকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসে আগুন দিয়ে সেখানে কর্মরতদের হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রায় দেড়শ থেকে ২শ’ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং সেখানে এক ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টি করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে আগুন দেয়, রেল লাইনের ফিসপ্লেট তুলে ফেলে। সেখানে ২ জন পুলিশ সদস্য মারা যায়। সেই সাথে বেলকা ইউনিয়ন পরিষদে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর করে। ওই সময় এমন অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছিল যে কোনো মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত জোট ৫৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ওই সময় তারা ঢাকা-রংপুর হাইওয়েতে প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্র রামদা, কিরিচ ও ডাল সরকি নিয়ে রাস্তায় টহল দেয় যাতে রাস্তায় কোন যানবাহন চলতে না পারে। ওই সময় হাজার হাজার গাড়ি পোড়ানো হয়, গাছ কাটা হয়। পলাশবাড়ীর মহেশপুর ইউনিয়ন, সাদুল্যাপুর, ঘোসাইগাতি ব্রিজ এলাকা, সাঘাটা উপজেলার রেল লাইনের ফিসপ্লেট উপড়ে ফেলা হয় যাতে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে জামায়াত-শিবির খুব সক্রিয় ছিল। তুলসি ঘাটে বাসে আগুন দিয়ে ৯ জনকে হত্যা করে এবং আরো অনেকে আগুনে পুড়ে আহত হয়। গোবিন্দগঞ্জে তরুণ দত্ত, দেবেস প্রামাণিক নামে দু’জনকে গলাকেটে রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়। সুন্দরগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা মামুনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে তারা আবার সরকার উৎখাতের নামে একই তাণ্ডব চালায়। সারা বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষকে তারা হত্যা করে। প্রায় ২৩১ জনকে পেট্রোল বোমা দিয়ে হত্যা করে। ট্রাক ও সিএনজি ড্রাইভার, রিকশাচালক, ঠেলাওয়ালা, ট্রাক-বাসের হেলপার রেল-লঞ্চ কোন কিছুই তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। বিএনপি-জামায়াত জোটের আক্রমণে কলেজছাত্র অভি, ৬ বছরের রুপা, অন্তঃস্বত্বা নারী মনোয়ারা ও তার গর্ভের সন্তান নিহত হয়।
শিশুর গায়ে গুলি করা হয়েছিল বলে লিটনের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সৌরভের বাবা আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। ওই পরিবারের সাথে লিটনের সুসম্পর্ক ছিল। তাকে সে কেন গুলি করতে যাবে? সেদিন সন্ত্রাসীরা লিটনকে হত্যা করার জন্য অতর্কিত হামলা চালায়। সে আত্মরক্ষার জন্য ফাঁকা গুলি চালায়। সৌরভের গায় যে আঘাত লেগেছিল সেটা নিয়েও অনেক সন্দেহ ছিল বা হতে পারে ফাঁকা গুলিও কারো গায়ে লাগতে পারে। কিন্তু শিশু হত্যা করতে গিয়েছিল বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এমনভাবে লেখা হয়েছে যে সত্যিকারের ঘটনা কেউ তুলে ধরেনি।
তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর তার লাইসেন্স করা অস্ত্র জব্দ করা হয়। তার বাড়ির পুলিশ পাহারা সরিয়ে নেয়া হয়। যার ফলে তার বাড়িতে ঘরের ভেতরে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করে সে এ পর্যায়ে এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বলেই তাকে সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত করা হয় এবং সেখানকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন ততদিন সুন্দরগঞ্জের মানুষের মনে একটা স্বস্তি ছিল।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে ওই এলাকায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বাংলাভাই থেকে শুরু করে জেএমবি নেতারা উত্তরবঙ্গে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র নিয়ে ওই সময় ট্রাকে মিছিল করেছে। বিএনপি-জামায়াতের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা তাদের উৎসাহ যুগিয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তা দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের পর ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট নারী ধর্ষণ, হত্যা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, লিটন গোলাম আযমকে তার এলাকায় যেতে দেয়নি। এছাড়া সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র লিটনকে হত্যার মধ্য দিয়ে এসব ঘটনার প্রতিশোধ নিয়েছে।