বার্তা৭১ ডটকমঃ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ, মাদক একটা মানুষকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয়। মাদকাসক্তি শুধু একজন মানুষকে নয়, একটা পরিবারকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। আর জঙ্গিবাদ নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয় এটা একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এই সমস্যার উৎসটা কী? আমরা ধর্মে বিশ্বাস করি। ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের স্থান নেই। মানুষ খুন করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না।’
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ হওয়ার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ‘তারা কীভাবে একটা ভালো ও অর্থশালী পরিবারের সন্তান হয়েও জঙ্গিাবাদের পথে যেতে পারে! কীসের আশায়? জঙ্গিবাদের পথে গেলেই বেহেশেতে যাবে? যারা গেছে তারা কি তাদের খবর পাঠিয়েছে তারা বেহেশতে গেছে? সেই খবর তো কেউ দিতে পারেনি। ’
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না।’
শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। আর এ পথে যারা যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। একটা ছেলে-মেয়ের জীবন অনেক মূল্যবান। তারা নিজেকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে এটা কখনো হয় না। এটা কখনো হতে পারে না।’
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, খালেদা জিয়া যখন হুমকি দিল- আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে ছাত্রদলই যথেষ্ট , আমি তখন ছাত্রলীগের হাতে কাগজ-কলম তুলে দিয়েছিলাম।’
নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে নিজ নিজ এলাকায় কোনো নিরক্ষর মানুষ আছে কি না তার খোঁজ নিতে হবে। নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দিতে হবে এবং তার জন্য সকলকে কাজ করতে হবে। আমরা শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যেহেতু ছাত্রলীগের নীতি হচ্ছে শিক্ষা শান্তি প্রগতি, কাজেই শিক্ষার আলো জ্বেলে প্রগতির পথ বেয়ে শান্তির পথ হয়ে প্রগতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে আমরা প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে যেতে চাই। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। এটা যেন থেমে না যায়। তার জন্য ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে নিজেকে তৈরি করতে হবে। এই দেশ এই রাষ্ট্র পরিচালনায় একদিন তোমাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ উঠে আসবে। কিন্তু সেসময় যেন আর পিছনে ফিরে যেতে না হয়। আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।’
তিনি আরো বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি, সেই মর্যাদা আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা পারব এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। এটা আমরা পারব- এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমাদেরকে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আজকে আমরা নিজেদের অর্থায়নে যদি পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারি তাহলে বাংলাদেশকেও উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে পারব। এখন বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ নিম্নে থাকবে না, ঊর্ধ্বে উঠবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা অবশ্যই মধ্যম আয়ের দেশ করতে পারব। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে একটি শান্তির দেশ। জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে সুইজারল্যান্ড অব দ্য ইস্ট। অর্থ্যাৎ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আমাদের এই সুযোগ আছে। আজকে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বয়স হয়েছে। আজকে যারা তরুণ ও ছাত্র তাদের হাতে ভবিষ্যত নেতৃত্ব উঠবে। তাদেরকে দেশসেবার ব্রত নিয়ে বাংলার জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।’
ছাত্রলীগকে আরো সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ এই দেশের প্রতিটি অর্জনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছাত্রলীগের অনেক কর্মী মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, এ কথা মনে রাখতে হবে। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। সেই ঐতিহ্য সামনে নিয়ে ছাত্রলীগ দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে এটাই আমি চাই।’