পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ ও কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের কাছে কমিশন চাওয়ার বিষয়ে তথ্য সংবলিত কাগজপত্র দিতে বাংলাদেশে এসেছে কানাডার মাউন্টেড পুলিশ। সোমবার বিকালে দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মো: সাহাবউদ্দিন চুপপু ও পুলিশের একটি সূত্র।
দুদকের একটি সুত্র জানায়, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে বেরিয়ে আসা তথ্য সংবলিত কিছু কাগজপত্র দিতে রোববার মধ্যরাতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে কানাডার মাউন্টেড পুলিশের দল। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর জানা যাবে কারা কিভাবে এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া এর সাথে কারা কিভাবে জড়িত আছে তা জানা যাবে। পরবর্তীতে দুদক ওই প্রতিবেদনের সুত্র ধরে তদন্ত করে ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন করবে বলে সুত্রটি জানায়। এর আগে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।
এদিকে, সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, কমিশনার মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপপু ও মোঃ বদিউজ্জামানকে দেখা যায়নি। দুদক সুত্রে জানা গেছে, কানাডীয় মাউন্ডেস পুলিশের সাথে দুদক কর্মকর্তারা সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। এ সময় তারা দুদক কর্মকর্তাদের কাছে তদমত্ম প্রতিবেদনের কাগজপত্র হস্তান্তর করেন।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কানাডার পুলিশ সদস্যরা রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ দুদক কার্যালয়ে আসার কথা থাকলে তারা গতকাল আসেননি। আর এতে কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। যার কারণে তারা দুদক কর্মকর্তাদের সাথে বাইরেও সাক্ষাত করতে পারেন। কানাডীয় পুলিশের তদন্ত দল দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যেখানেই মিলিত হবেন সেখানেই তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে তদন্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র হস্তান্তর করবেন। আরেকটি সূত্র জানায়, গণমাধ্যমের মুখোমুখি না হতে কানাডীয় পুলিশের সঙ্গে দুদক কর্মকর্তারা বাইরে সাক্ষাত করেছেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি মূল্যায়ন কমিটি পরামর্শক হিসেবে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করেছিল। এর প্রথমটি ছিল এসএনসি-লাভালিন। অন্যগুলো হলো- যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান হালক্রো গ্রুপ (ইউকে), নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান একম অ্যান্ড এজেডএল, জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি হাই পয়েন্ট রেলেন্ড।
এর মধ্যে এসএনসি-লাভালিনকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে অনুমোদনের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এরপরই এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার সহায়তা স্থগিত করে দেয়া। এ নিয়ে কানাডা পুলিশ এখনো তদন্ত করছে। আর তদন্তে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক এসএনসি-লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
বিষয়টি তদন্ত করতে বিশ্বব্যাংক থেকে কানাডা সরকারের কাছে অভিযোগপত্র পাঠানো হয়। এর ভিত্তিতে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে (আরসিএমপি)। এরপর পুলিশ এসএনসি-লাভালিনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ওই অফিসের ল্যাপটপসহ বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করে নিয়ে যায় এবং রমেশ ও ইসমাইল নামের দুইজনকে গ্রেফতার করে। জব্দ করা নথিপত্রের মধ্যে একটি ডায়েরিতে পদ্মাসেতুর পরামর্শক কাজ পেতে বাংলাদেশে যোগাযোগ করার জন্য একটি তালিকা পাওয়া যায়। এরই মধ্যে ওইসব তথ্য কানাডিয়ান পুলিশ বিশ্বব্যাংকের কাছে দিয়েছে। একই রিপোর্ট হাতে পেতে দুদক অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করে। ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে এসে তদন্ত রিপোর্ট দুদকের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয় কানাডীয় মাউন্টেড পুলিশ।
দুদক সূত্র জানায়, কানাডিয়ান পুলিশ কিছুদিন আগে এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তাকে আটক করেছিল। এদের একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রমেশ সেন, অন্যজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মো. ইসমাঈল। রমেশের পরামর্শেই হুইপ লিটন চৌধুরীর ছোট ভাই নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসমাইল এবং বাংলাদেশে তাকে এসএনসি লাভালিনের প্রতিনিধির পক্ষে কাজ করার জন্য বলা হয়।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক দুদকে কাছে কিছু তথ্য সরবরাহ করেছে। এরই সূত্র ধরে ১৪ জনের তালিকা তৈরি করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় পরামর্শক হিসেবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে লাভালিন নির্বাচিত হয়েছিল।
তবে কানাডিয়ান পুলিশের প্রতিনিধি দলের ঢাকায় আগমনকে কেন্দ্র করে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করে দুদক ও সংশ্লিষ্টরা।