প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাইনাস টু’র ষড়যন্ত্র এখনও হচ্ছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা এ ষড়যন্ত্র করেছিল, সে সময় ব্যর্থ হলেও তারা এখনও সুযোগ খুঁজছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি ফের নাকচ করে তিনি বলেছেন, এ পদ্ধতির অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দানব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তারা কী করেছিল সেটা দেশের মানুষের জানা আছে। সেজন্য তত্ত্বাবধায়করূপী দানবের ইতিহাস যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বুধবার তার কার্যালয়ে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি বুঝতে পারছে না, মাইনাস টু ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। তখন তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে যে ষড়যন্ত্র শেষ হয়েছে, তা নয়। যারা এটা করতে চেয়েছিল, তারা এখনও সক্রিয় আছে। তাদের খায়েশ শেষ হয়নি।
তিনি বলেন, যারা জনগণের রাজনীতিতে আসতে পারবে না, ক্ষমতায় বসতে পারবে না, তারাই অসাংবিধানিকভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। কারণ তারা জানে, জনগণ তাদের চায় না। দেশে গণতান্ত্রিক কিংবা স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে যাদের মূল্যায়ন হয় না, তারাও তত্ত্বাবধায়কের কথা বলছে। এ ধারা বন্ধ করে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
বৈঠক সূত্র আরও জানিয়েছে, পেশাজীবী নেতারা নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রতিটি পেশাজীবী সংগঠনেই এ দ্বন্দ্ব কাজ করায় প্রতিপক্ষ এর সুযোগ নিচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের নির্বাচনে পরাজয়ের কারণও এটাই। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে তারা
বলেন, আমরা ক্রমশ নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে যাচ্ছি। এতে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারি। তাই এ বিষয়ে এখন থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, তিন বছরে বর্তমান সরকারের অর্জন অনেক হলেও সরকার কিংবা দলের পক্ষে সেগুলোর প্রচার যথাযথভাবে করা হচ্ছে না।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী পেশাজীবীদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে হবে। সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রচারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে, সেটাও স্বীকার করি। এ ব্যাপারে আগামীতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে বাসস ও ইউএনবি জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ভবিষ্যতে যাতে কষ্টার্জিত গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যাতে কেউ অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করতে না পারে সে ব্যাপারেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা অতীতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছি এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি; কিন্তু গণতন্ত্র বিভিন্ন সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখন আমাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি বলেন, তার সরকার অবৈধ ক্ষমতা দখল বন্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারে সংবিধান সংশোধন করে ‘সেফটি ক্লজ’ বসিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে।
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার কারণে সব ক্ষেত্রে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থা রেখে ক্ষমতা ছেড়েছে। দেশকে আরও একটি কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে রাতারাতি ১৩ সচিবকে চাকরিচ্যুত করে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শেষ করে জাতিকে অবশ্যই আর এক কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার মামলা ও বিডিআর বিদ্রোহের মতো স্পর্শকাতর মামলার বিচার কাজও অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। বিরোধী দল এসব বর্বর অপরাধ সংঘটনকারীদের রক্ষা করতে অগি্নসংযোগ, ভাংচুর ও বোমাবাজির মতো সন্ত্রাসী কর্মকা চালাচ্ছে।
কৃষি, শিক্ষা, ডিজিটালাইজেশন, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করাই হচ্ছে তার সরকারের লক্ষ্য।
এ সময় পেশাজীবী নেতারা সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গটি তোলেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করা এবং অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন তারা। প্রধানমন্ত্রী পেশাজীবীদের কথা শোনেন এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বিচারপতি মিসবাহউদ্দিন আহমেদ, মহাসচিব প্রফেসর ড. কামরুল হাসান খান, সম্মিলিত পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক প্রকৌশলী এসএম খবিরুজ্জামান, বিএফইউজে সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একেএম সাইদুল হক চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি প্রফেসর এবিএম ফারুক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর নূর মোহাম্মদ তালুকদার, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব ডা. রোকেয়া সুলতানা, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর হাননাস বেগম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ ও বুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এসএম নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।