পুলিশ কি জিনিস আজ তোদের দেখাবো! আমার ছবি তুলেছিস? পত্রিকায় ছাপানোর আগে তোদের হাসপাতালে পাঠাবো। এই ওদের পিটিয়ে চামড়া তুলে দে ! গতকাল এভাবেই সাংবাদিকদের পেটাতে নির্দেশ দেন তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তার নির্দেশ পেয়ে সাংবাদিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একদল পুলিশ। নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয় দৈনিক প্রথম আলোর ৩ ফটোসাংবাদিককে। এ সময় শেরেবাংলানগর থানার ওসি (তদন্ত) কবীর এসে ফটোসাংবাদিক সাজিদকে পেছন থেকে সজোরে লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দেন। এ ঘটনায় প্রথম আলোর যে ৩ ফটোসাংবাদিক আহত হয়েছেন তারা হলেন- সাজিদ, জাহিদুল করিম ও খালেদ সরকার। পিটিয়ে রক্তাক্ত করার পর সহকারী কমিশনার শহীদুল ইসলামের নির্দেশে তাদেরকে টেনেহিঁচড়ে শেরেবাংলানগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আহত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয় পুলিশ। সাংবাদিকরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানালে সহকারী পুলিশ কমিশনার শহীদুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া ১ এসআই, ২ এএসআই ও ৬ কনস্টেবলসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- এসআই জহির, এএসআই শফিক ও এএসআই নাজমুল, কনস্টেবল ছয়জন হলেন মতিউর, রাজ্জাক, শাহজাহান, জয়নাল, রতন ও জাহাঙ্গীর। গতকাল যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ইমাম হোসেন বলেন, দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। যাদের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার সাহাবউদ্দীন কোরেশীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত ফটোসাংবাদিক জাহিদুল করিম বলেন, মহিলা পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রীরা অবরোধ তুলে নিয়ে যখন মিছিল নিয়ে ফিরছিল তখন আরও ভাঙচুর হয় কিনা তা দেখতে রাস্তার বিপরীত পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। সহকারী কমিশনার শহীদুল জিজ্ঞেস করেন কেন দাঁড়িয়ে আছি? আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলি, কোন ঘটনা ঘটলে ছবি তুলবো। এতে শহীদুল ইসলাম আমার মা, বাবা তুলে গালি দিতে শুরু করেন। আমি তাকে গালি না দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি আরও ক্ষেপে যান। বলেন, সাংবাদিক অনেক দেখেছি, অনেক সাংবাদিক পিটাইছি- এই বলে তিনি আমাকে মারার নির্দেশ দেন। আহত অপর ফটো সাংবাদিক সাজিদ বলেন, আমি জাহিদুলকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে গেলে আমার ক্যামেরা কেড়ে নেয় পুলিশ। আমাকেও তারা প্রচণ্ড মারধর করতে শুরু করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিনিয়র ফটো সাংবাদিক খালেদ সরকার। পুলিশ এ সময় তাকেও পেটাতে শুরু করে। এ সময় শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের থানায় নিয়ে যেতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশ তিন ফটো সাংবাদিককে পেটাতে পেটাতে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় শহীদুল ইসলাম বলতে থাকেন, পেটা শালাদের পেটা, সাংবাদিক পেটা। সাংবাদিক মারলে কিছু হয় না। খবর পেয়ে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা শেরেবাংলানগর থানার ওসি জাকির হোসেনকে নিয়ে থানায় গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। পরে গুরুতর আহত তিন ফটোসাংবাদিককে পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। জাহিদুল করিম বলেন, মারধরের একপর্যায়ে পুলিশ আমাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। ক্যামেরা না ভাঙার জন্য আমরা অনুরোধ করি তাদের। যোগাযোগ করা হলে সহকারী পুলিশ কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি কোন সাংবাদিককে মারধর করার নির্দেশ দিইনি। তারা হয়তো এমন কোন আচরণ করেছে যার কারণে পুলিশ তাদের মারধর করেছে। শেরেবাংলানগর থানার ওসি (তদন্ত) কবীর বলেন, ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। কি ঘটেছে আমি দেখিনি। শেরেবাংলা থানার ওসি জাকির হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নজরুল ইসলামকে দেখতে আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। খবর পেয়ে সেখান থেকে সাংবাদিক গোলাম মর্তুজাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। নিজে দায়িত্ব নিয়ে আহত সাংবাদিকদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় আজ সকাল থেকে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে মহিলা পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। প্রথম আলোর তিন ফটোসাংবাদিক সেখানে ছবি তুলতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ও বেপরোয়া লাঠিপেটা করে। এতে ওই তিন ফটোসাংবাদিক গুরুতর আহত হন। সাংবাদিকরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।