ঢাকা, ২৭ মে: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘অনিশ্চয়তা’ কাটাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘ফর্মুলা’ দিয়েছে মহাজোট সরকারের শরীক দলগুলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে এই সরকারের রূপরেখা নিয়ে ভাবতে বলেছেন জোটের শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে এ ইস্যুতে আলোচনা অথবা বিকল্প কোনো প্রস্তাব থাকলে তা তুলে ধরতে আহবানও জানিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। বৈঠক সূত্র বার্তা৭১ ডটকমকে এ খবর জানিয়েছেন।
রোববার সকাল সোয়া এগারোটায় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, কাজী জাফরুল্লাহ, উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য আব্দুল জলিল, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ওয়র্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান সেলিম, গণআজাদী লীগের হাজী আব্দুস সামাদ, ন্যাপ’র এনামুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা দাড় করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজকের বৈঠকের বিষয়বস্ত্ত নিয়ে আলোচনার পর আবার বৈঠক ডাকা হবে। সে বৈঠকেই চূড়ান্ত মতামত দিতে পারবেন জোট নেতারা।
সূত্র জানায়, অন্তবর্তীকালীন সরকারে কোন মন্ত্রণালয় কার অধীনে থাকবে- মন্ত্রী না উপদেষ্টা কাদের হাতে ক্ষমতা থাকবে-এ বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন জোট নেতারা। কারণ প্রধানমন্ত্রী শনিবারের বক্তব্যে নির্বাহী, স্বরাষ্ট্র বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকার কথা জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে আরো শক্তিশালী করা হবে এ বিষয়েও তাদের মতামত জানিয়েছেন জোট নেতারা।
জানা যায়, শরীক দলগুলোর পক্ষে রাশেদ খান মেনন, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মাইনুদ্দিন খান বাদল, ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, নুরুর রহমান সেলিম, এনামুল হক, হাজী আব্দুস সামাদ, অসিত বরণ রায় বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় আব্দুল জলিল, লতিফ সিদ্দিকী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং মোহাম্মদ নাসিম বক্তব্য দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে প্রায় চল্লিশ মিনিটের বক্তব্যে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি তার বক্তব্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঝটিকা বাংলাদেশ সফর এবং সফর পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে কথা বলেন।
আশরাফের পর বক্তব্য দেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি ১১ দলের শনিবারের বৈঠকের সারমর্ম তুলে ধরেন। এ সময় তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে তার মতামত দেন এবং অন্যদের মতামত জানতে চান।
বৈঠক সূত্র জানায়, রাশেদ খান মেনন এবং নুরুর রহমান সেলিম বিএনপির সাথে সংলাপে বসে আগামী নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের আগামী বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে রাখার কথা বলেন।
আব্দুল জলিল তার বক্তব্যে ১৪ দলকে সংগঠিত করার আহববান জানান। আগামী নির্বাচনের আগেই দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ১৪ দলকে সংগঠিত করে একযোগে মাঠে নামার পরামর্শ দেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, জাতীয় সংসদ যদি ঐক্যমতে আসতে পারে তাহলে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা হবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রতি মাসের শেষ মঙ্গলবার ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তবে পালন করা হয় না বলে মমত্মব্য করলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরম্নল আম্বিয়া। তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও ১৪ দলের মিটিংয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো পালন করা হয়ে ওঠে না।’’
তবে সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত ১৪ দলকে জানানো হচ্ছে না শরীকদের এমন অভিযোগের জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, এ নিয়ে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত হলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই এমন হচ্ছে।
বৈঠক শেষে সভাপতি সাজেদা চৌধুরী বলেন, আজকের মিটিংয়ের বক্তব্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের পর ১৪ দলের পরবর্তী মিটিংয়ে এ বিষয়ে আরো স্পষ্ট মত দিবে আওয়ামী লীগ। প্রয়োজনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে বসানোর ব্যাবস্থাও করে দিবেন বলে জানান সাজেদা চৌধুরী।
সূত্র জানায়, নূরুর রহমান সেলিম বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈদেশিক হস্তক্ষেপের নিন্দা করে বলেন, বিদেশি হস্তক্ষেপ ক্রমেই বাড়ছে বাংলাদেশে। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে সব ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরের দাবিও জানান তিনি।
ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম সরকারকে গার্মেন্টস সেক্টরে বিশেষভাবে নজর দিতে বলেন। তিনি বলেন, এ খাতকে ধ্বংস করার একটি চক্রান্ত চলছে এবং সাম্প্রতিক আন্দোলনে স্থানীয় সংসদ সদস্য উস্কানি দিয়েছিলেন।
চট্টগ্রামের দুই সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং মাইনুদ্দিন খান বাদলের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বাদলের জবাবে নিজের লিখিত বক্তব্য সাজেদা চৌধুরীর হাতে তুলে দেন, সাজেদা চৌধুরী তা সৈয়দ আশরাফকে দেন।
তাছাড়াও বাদল বলেন, তিনি ইতিমধ্যে সবকিছু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন এবং তিনি ব্যবস্থাও নিয়েছেন।
দীর্ঘ বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফ সাংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। বিষয়টিতে ১৪ দলের নেতারা একমত। অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতোই বাংলাদেশেও যথাসময়ে নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এসময় স্থানীয় প্রশাসন সহ অন্যান্য সহযোগী প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।’’