গোয়াইনঘাট থানার ওসি মোমিনের সঙ্গে কলগার্ল সাথীর সম্পর্ক জানতে দেরি হয়নি ঢাকায় বসবাসরত তার স্ত্রী আক্তারুন্নেছা লিজা’র। তিনি থানা কম্পাউন্ডের বাসায় তাই সুযোগমতো হানা দেন। হাতেনাতে অসংলগ্ন অবস্থায় ধরে ফেলেন স্বামী ও সাথীকে। ঘটনার শেষ এখানেই নয়। গোয়াইনঘাট থেকে ধাওয়া খেয়ে ওসি মোমিন ও সাথী সিলেট নগরীর দরগা গেইটের পায়রা হোটেলের একটি কক্ষে ওঠেন। সেখানেও হানা দেন লিজা। আবারও হাতেনাতে দু’জনকে ধরে ফেলেন। এ ঘটনার পর সেখানে ছুটে যান সিলেটের ডিবি পুলিশের একটি দল। তবে এর আগেই ওখান থেকে পালিয়ে যান মোমিন। খবর পেয়ে পুলিশের আগেই সেখানে ছুটে যান সাংবাদিকরা। দেখেন হোটেলের ভেতরেই সাথীর বোরকার কলারে ধরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামাচ্ছেন ওসি’র স্ত্রী লিজা। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে সাথী তার মুখ ঢাকার চেষ্টা করে। তখন লিজা বলে ওঠেন, তোর মুখ দেখা। সাংবাদিকরা তোর ছবি তুলুক। আমার সংসার ভেঙে তোর কি লাভ? এ কথা বললে বলতে তিনি সাথীকে নিয়ে হোটেলের নিচ তলায় চলে আসেন। ডিবি পুলিশের সদস্যরা এরপর সাথীকে নিয়ে ডিবি অফিসে চলে যান। এ সময় আক্তারুন্নেছা লিজা সাংবাদিকদের জানান, হোটেলে এসেও দেখলাম তারা এক সঙ্গে। ধরা পড়ার পর মোমিন স্ত্রী লিজাকে জানিয়েছেন, সাথীর সঙ্গে কথা বলতে তিনি হোটেল কক্ষে এসেছেন। তবে তিনি আসার সময় বেশি হয়নি। কিন্তু লিজা তার কথা বিশ্বাস করেননি। এদিকে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইব্রাহিমকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন সিলেট সদর উত্তর সার্কেলের এএসপি বীণা রানী ও পুলিশ পরিদর্শক আবদুল গণি। ডিবি কার্যালয়ে সাথীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদে সাথী জানান, ওসি মোকসেদুল মোমিনের সঙ্গে তার কয়েক মাসের সম্পর্ক। এ সম্পর্ক গভীর। সে প্রায় সময়ই ওসি’র বাসায় গিয়ে রাত কাটাতো। তাদের সম্পর্কের কথা জানতেন ওসির স্ত্রী লিজাও। এদিকে, গোয়াইনঘাটে আটকের পর ওসি মোমিন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সাথী তার স্ত্রী। চার বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। তবে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ওসি মোমিন বিয়ে সম্পর্কে কোন কাগজপত্র পুলিশের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। সিলেটে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে সাথীকে। ছেড়ে দেয়ার সময় ওসির স্ত্রী লিজাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে গতকাল বিকালে সিলেটের উত্তর সার্কেলের এএসপি বীণা রানী মানবজমিনকে জানান, সাথীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি সাথীকে প্রয়োজন হলে আবার ডাকবে। সাথী কমিটির ডাকে সাড়া দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। আজ ওই কমিটির সদস্যরা গোয়াইনঘাট যাবে। ওদিকে, ওসি মোমিনের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিব্রত সিলেটের পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। সিলেটের পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ওসি মোকসেদুল মোমিন বর্তমানে সিলেটে অবস্থান করছেন। তাকে গোয়াইনঘাট থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কে এই সাথী: সাথীর পুরো নাম খাদিজা আক্তার সাথী ওরফে খুশি। সিলেটে পরিচিত সাথী হিসেবে। খুশি ফরিদপুর জেলার চর ভদ্রাসন উপজেলার হাজার বিঘা গ্রামের ইসমাইল শিকদারের মেয়ে। বছর খানেক আগে জাফলং লাখেরপার গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু সে বিয়ে বেশি দিন টেকেনি বলে জানিয়েছেন খুশির বোন নাসরিন বেগম। গতকাল মোবাইল ফোনে তিনি জানান, খুশির সঙ্গে প্রথমে প্রেম হয় সাদ্দামের। ঢাকার ডেমরা এলাকায় বসবাস করেন খুশিসহ পরিবারের অন্যরা। ডেমরার বাসায়ই বিয়ে হয় সাদ্দাম ও খুশির। বিয়ের পর সিলেটের জাফলংয়ে চলে যান খুশি। গত রমজান মাসে খুশি ও সাদ্দামের মনোমানিল্য হলে তারা ডিভোর্স নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। খুশি সিলেটের মদিনা মার্কেটের একটি বাসায় থাকতো। ঢাকা থেকে তারা শুনেছেন, সাদ্দামের সঙ্গে খুশির আবার সম্পর্ক উন্নতি হয়েছে। ৫ লাখ টাকা কাবিনের বিনিময়ে সাদ্দামের সঙ্গে তার আবার বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এর সত্যতা খুঁজে পাননি তিনি। তিনি জানান, এই এক বছরের মধ্যে খুশি ঢাকায় বেশ কয়েকবার গেছে। ডেমরায় মায়ের বাসায় খুশির সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। সিলেট থেকে বাহাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ফোন করে জানিয়েছেন ওসি মোমিনের সঙ্গে খুশির কেলেঙ্কারীর কথা। ঘটনাটি শোনার পর থেকে তার মোবাইল ফোনে তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাকে পাচ্ছেন না। সে কোথায় আছে, কেমন আছে সে খবর না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন।