ঢাকা : দেশে বিরাজমান বিদ্যুৎ সংকটের কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। এ সংকট মোকাবেলায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই সরকার দলের সংসদ সদস্যরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হককে।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী শুধুই আশ্বাস আর বিদ্যুতের পথ নকশা বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগের কথা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেননি।
তীব্র ক্ষোভের মুখে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দাবি করে বর্তমানে চলমান সংযোগে লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তারা অবিলম্বে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের যথাযথ ব্যবস্থার দাবি জানান।
জাতীয় সংসদের প্রশ্ন উত্তরপর্বে সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা মিরপুরে মধ্যরাতে বিদ্যুৎ থাকে না। এ অবস্থা চললে আগামী নির্বাচনে মহাজোটের ভরাডুবি সুনিশ্চিত। জনগণ আর এ সরকারকে ভোট দেবে না।
তিনি বলেন, আমার ধারণা বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ইচ্ছাকৃতভাবে লোডশেডিং দিচ্ছেন। এটা তদন্ত করা উচিত এবং যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, বিদ্যুতের জন্যই গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভরাডুবি হয়েছিল। আগামীতে আমাদেরও যাতে একই অবস্থা না হয় সেজন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, মহাজোট সরকারের ৫ বছরের সাড়ে ৩ বছর চলে গেছে। নির্বাচনের সময় আর বেশি নেই। ভোটের জন্য আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে। সুতরাং বাকি সময়ের মধ্যে আমাদের নির্বাচনী এলাকায় কি পরিমান বিদ্যুৎ দিতে পারবেন তা স্পষ্ট করতে হবে।
ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, নির্বাচনী এলাকার একশ’ জন লোক আমার সাথে দেখা করলে ৮০ জনই বিদ্যুৎ দাবি করেন। আমার এলাকার মানুষের বিদ্যুতের দাবি পুরণ করবেন কি না? তা এখনই পরিষ্কার করে বলুন।
আতিউর রহমান আতিক বলেন, গত নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যরা বিদ্যুৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আর মাত্র দেড় বছর সময় বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে আমরা তাদের দাবি পুরণ করতে পারবো কি না? তাছাড়া ২০১২-১৩ অর্থ বছরে আমরা কি পরিমান বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবো সেটাও জানা দরকার।
এসব সম্পুরক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, উৎপাদনের ভিত্তিতে সারাদেশে বিদ্যুতের সুষম বন্টন করা হচ্ছে। বিদ্যুতের পথ নকশা অনুসারে সরকার কাজ করছে। আমরা বিদ্যুতের যে পূর্বাভাস করেছিলাম তার তুলনায় বর্তমানে চাহিদা অনেক বেশি।
তিনি বলেন, অত্যন্ত গরমে এসি এবং ফ্যানের লোড বেড়ে গেছে। গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪০ লাখ। এজন্য বিদ্যুতের সংকট হচ্ছে। তবে এ সংকট স্থায়ী হবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমদানি নির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে খনিমুখে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পরিকল্পনার আওতায় বড় পুকুরিয়া কয়লা খনিমুখে ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তৃতীয় ইউনিটটি স্থাপনের লক্ষ্যে বর্তমানে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করা যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০১৫ সাল নাগাদ চালু হবে।
এছাড়া পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১০-এ দেশীয় কয়লা দ্বারা কয়লা খনিমুখে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ১১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পর্যন্ত সরকারি-বেসাকরি খাতে মোট ৬ হাজার ২৪১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৩৮৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৯টি কেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে।