দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে রাজি হলেন না আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক-প্রচারে জল ঢেলে সোমবার বিকালে প্রেস বিবৃতি মারফত জানিয়ে দিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। কালাম প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী না হওয়ায় স্পষ্টতই অস্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে একটি সূত্রে খবর মিলেছে। তবে সোমবার তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সব এমপি ও এমএলএ ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। ওই বৈঠকে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের যে ছয় জন মন্ত্রী রয়েছেন তারা সকলেই এদিন দলনেত্রীর কাছে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফাপত্র তুলে দিয়েছেন। কালাম প্রার্থী না হওয়ার কথা জানানোর পর মমতার সিদ্ধান্ত নিতে যাতে কোন রকম অসুবিধা না হয় সে জন্য মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন মমতা কি সিদ্ধান্ত নেন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল। মমতাই কালামের নাম প্রস্তাব করে ফেসবুকে গত কয়েকদিন ধরে প্রচার চালিয়েছিলেন। তিনি ভারতের প্রেসিডেন্ট পদে কালামকেই দেশের এই সন্ধিক্ষণে উপযুক্ত বলে জানিয়েছিলেন। এদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে এখনও দোলাচলে এনডিএ নেতৃত্ব। প্রবল মতবিরোধ রয়েছে বিজেপি শিবিরেও। গতকাল আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবৎ জোর গলায় কালামকে প্রার্থী করার পক্ষে সওয়াল করলেও ১১ অশোক রোডের একাংশের মত ছিল, গতবার ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াতকে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে ঠেলে দেয়ার ফলে দলের মুখ পুড়িয়েছিল। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কালামের ক্ষেত্রে তেমনটা হওয়া আদৌ সমীচীন নয়। অনিশ্চয়তার এই আবহের মধ্যেই সোমবার এপিজে আবদুল কালামের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানী নিজের ঘনিষ্ঠ নেতা সুধীন্দ্র কুলকার্নিকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে পাঠান। এর কিছুক্ষণ পরই নিজের সিদ্ধান্তের কথা সংবাদ সম্মেলন ডেকে জানাবেন বলে ঘোষণা করেন আবদুল কালাম। বিকালের মধ্যেই প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে ঘোষিত হয় তার সেই ‘সিদ্ধান্ত’। কালামের সিদ্ধান্ত জানার পরও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি এনডিএ শিবির। প্রার্থী দেয়া নিয়ে ক্রমশ সামনে চলে আসছে জোটের অন্তর্দ্বন্দ্ব। বিজেপি’র সঙ্গে শরিক দলগুলোর মতভেদের জেরে রোববারের এনডিএ বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যেই প্রার্থী হিসেবে কালামের নাম প্রস্তাব করে বিজেপি’র ওপর চাপ বাড়ানোর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরএসএস-র পরিচালকরা কি করবেন, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। রাজনৈতিক মহলে প্রবল জল্পনার মধ্যেই এদিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঐকমত্যের ওপরই জোর দিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পক্ষে সমর্থন চেয়ে তাকে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আদভানী-গড়কড়িয়া সংঘাত এড়াতে প্রেসিডেন্ট পদে প্রণব মুখার্জিকে মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, নাকি নবীন পট্টনায়েক-জয়ারাম জয়ললিতার প্রার্থী পূর্ণ অ্যাজিটেক সাংমাকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ তৈরি করবেন- সেটাই এখন দেখার বিষয়।