বার্তা ৭১ ডট কমঃ এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নয়, আগুন জ্বলেছে আমারও বুকে। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যারা পুড়িয়ে দিতে পারে, তাদের শিক্ষিত করে কী লাভ! যে ছাত্ররা কলেজের ছাত্রাবাস পোড়ায়, সে ছাত্র আমাদের দরকার নেই। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের প্রস্তাবিত তালিকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছিল। কিন্তু ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়ায় সম্ভাবনার মৃত্যু হলো। কথাগুলো বলতে বলতে ক্ষোভে-রাগে-হতাশায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ চোখের পানিও ধরে রাখতে পারেননি।
এক সময় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) শিক্ষার্থী ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ছাত্রজীবনে দীর্ঘদিন থেকেছেন শতবর্ষের ঐতিহ্যের স্মারক ওই কলেজ ছাত্রাবাসের প্রথম বল্গকের ৩ নম্বর কক্ষে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে অঝোর বৃষ্টির মধ্যে ভস্মীভূত ছাত্রাবাস পরিদর্শনে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী। ছাত্রজীবনে ছাত্রাবাসের যে কক্ষে থাকতেন, ওখানে প্রবেশ করে আর কান্না সংবরণ করতে পারেননি তিনি। তার কান্না দেখে উপস্থিত অন্যদের চোখের পানিও বৃষ্টির পানিতে মিশে একাকার হয়ে যায়।
গত রোববার ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের পর ছাত্রাবাসের তিনটি বল্গকে অগি্নসংযোগ করা হয়। ছাত্রাবাস থেকে শিবিরকে বিতাড়িত করার পর ছাত্রলীগ ক্যাডাররা আগুন দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার চারদিন পর গতকাল শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও ভস্মীভূত ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। অর্থমন্ত্রী নিজেও এক সময় সিলেটের প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। নিজেদের এক সময়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে অগি্নসংযোগের পর পরই দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী।
গতকাল ছাত্রাবাস পরিদর্শনকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, যে-ই দোষী হোক, যে দলেরই হোক, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অগি্নসংযোগের ঘটনা তদন্তে কলেজ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সম্মিলিত আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তদন্ত কমিটি কোনো কারণে প্রভাবিত হলে প্রয়োজনে আবার নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিচার হতেই হবে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের অন্যতম স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই ছাত্রাবাসকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণার জন্য তিনি কথা বলেছিলেন। কিন্তু অগি্নকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ায় এ ছাত্রাবাস নিয়ে গোটা জাতি আজ মর্মাহত। তিনি বলেন, দেশ একটি ঐতিহ্য ও গৌরব হারাল। ওই সময় ধ্বংস হওয়া ছাত্রাবাসের বল্গকগুলো কাজ শিগগির শুরু হবে জানালেও কীভাবে হবে, তা নিশ্চিত করে বলেননি শিক্ষামন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন করে না পুরাতন অবকাঠামো রেখে সংস্কার করা হবে, এটা আমরা ভেবে দেখছি।
অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি, কলেজের অধ্যক্ষ ধীরেশ চন্দ্র সরকার, প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান এডিএম শহিদুল আলম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ূয়া, কলেজ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপাধ্যক্ষ আল হেলাল ভূঁইয়া প্রমুখ।